বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাতের ঢাকা ব্যাটারি রিকশার দখলে

সন্ধ্যা হতেই অলিগলি থেকে বেরিয়ে মূল সড়কে ♦ জরিমানা করে ছেড়ে দেয় পুলিশ ♦ একমাত্র পুলিশ চাইলে বন্ধ করতে পারে : ডিএসসিসি ♦ অভিযান অব্যাহত রয়েছে : পুলিশ

হাসান ইমন

রাতের ঢাকা ব্যাটারি রিকশার দখলে

রাতের ঢাকা থাকে ব্যাটারিচালিত রিকশার দখলে। সন্ধ্যা হতে অলিগলি থেকে বেরিয়ে মূল সড়ক দাপিয়ে বেড়ায় এসব রিকশা। দিনের বেলায় মূল সড়কে পুলিশের নজরদারি থাকায় এসব রিকশার উপস্থিতি কম দেখা যায়। মাঝেমধ্যে পুলিশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ধরলেও জরিমানা করে ছেড়ে দেয়। এসব রিকশার নিয়ন্ত্রণহীন চলাচলের কারণে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। অবৈধ এসব রিকশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও সড়কে এর কোনো প্রভাব নেই। সিটি করপোরেশন বলছে, একমাত্র পুলিশ চাইলে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করা সম্ভব।

জানা যায়, ২০১৪ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ দেন হাই কোর্ট। এরপর ২০১৭ সালে এসব পরিবহন বন্ধে আরেক দফা নির্দেশনা আসে হাই কোর্টের। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর অটোরিকশা বন্ধ ও আমদানি নিষিদ্ধ করে আবারও নির্দেশনা দেন হাই কোর্ট। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ২০২১ সালের ২০ জুন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এসব রিকশা-ভ্যান বন্ধের নির্দেশ দেন। বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশনও এগুলো বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাতের বেলায় নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিকশায় সয়লাব রাজধানীর মূল সড়ক। অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে দেখে পুলিশ আটক করলেও বাহনগুলোর চলাচল অব্যাহত রয়েছে। রাজধানীর পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, আরামবাগ, যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট, মালিবাগসহ কয়েকটি সড়কে রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। রামপুরা, খিলগাঁও, বাড্ডা, নয়াবাজার, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, কামরাঙ্গীর চর, চকবাজার, নাজিরাবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, দনিয়া, শনির আখড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্যাডেল রিকশায় মোটর ও ব্যাটারি লাগিয়ে চলাচল করছে। এলাকার মোড় দখল করে নিয়েছে বাহনটি। শুধু তা-ই নয়, রাতে অন্য যানবাহন না থাকায় যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়াও। রাতে অন্যান্য গাড়ির চাপ কমে গেলে ব্যাটারিচালিত এসব রিকশা নামতে থাকে। চলতে থাকে সব রুটেই। কোনো রুটেই বাধা নেই তাদের যেতে। আর রাতের বেলা বাস ও সাধারণ রিকশার সংখ্যা কম থাকায় ব্যাটারিচালিত এসব রিকশার কদর বেড়ে যায়। অদক্ষতার কারণে কখনো চালক, কখনোবা পথচারী শিকার হন দুর্ঘটনার। এ ছাড়া এসব যানে ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ। এভাবে কয়েক লাখ ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হচ্ছে গ্যারেজে। এতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আর লাভবান হচ্ছেন অসাধু অটোরিকশার মালিকরা। রামপুরার অটোরিকশাচালক রশিদ মিয়া বলেন, ‘মালিকে চালায়, তাই আমরা চালাই। মালিক বলে রিকশা তুই নিয়া যা। যা কিছু হয়, আমরা দেখব।’ পুলিশ জব্দ করে কি না জানতে চাইলে এই চালক বলেন, ‘পুলিশে ধরে। কয়েক দিন আগেই ধরা খাইছি। ৭২০ টাকা দিয়া ছাড়ায় নিয়া আসছি।’

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্যাডেলচালিত রিকশার নিবন্ধন করপোরেশনের রাজস্ব শাখা করে থাকে। ব্যাটারিচালিত রিকশা নিবন্ধনের বাইরে। এসব রিকশার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শুধু ২০২২ সালে এসব অবৈধ রিকশার বিরুদ্ধে ৪৭টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এ অভিযানে ২৬২টি ব্যাটারিচালিত রিকশা ধ্বংস করেছি। এ ছাড়া ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। করপোরেশনে একজন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তাকে দিয়ে সব অভিযান পরিচালনা করতে হচ্ছে। এই একজনকে দিয়ে তো প্রতিদিন রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এর পরও অভিযান অব্যাহত রেখেছি।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি পুলিশকেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। পুলিশ চাইলে এসব অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা বন্ধ করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশের ঢাকা দক্ষিণের যুগ্ম-কমিশনার এস এম মেহেদী হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ অভিযানে অবৈধ রিকশা দুই ধরনের শাস্তির আওতায় আনা হয়। প্রথমত রিকশা থেকে ব্যাটারি খুলে ফেলা হয়। দ্বিতীয়ত ডাম্পিং করা হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জরিমানা আদায় করা আমাদের নিয়মে নেই। কেউ করে থাকলে আইনের ব্যত্যয় করেছেন তিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর