শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

লাইব্রেরির অটোমেশন এক মাসেই বিকল

রাহাত খান, বরিশাল

৪০ লাখ টাকা খরচে আধুনিকায়নের এক মাসের মধ্যেই বিকল হয়ে গেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির অটোমেশন সার্ভিস। নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহারের কারণে দুটি মেশিনের এ অবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে ৫ জানুয়ারি থেকে অটোমেশনের সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন হাজারো শিক্ষার্থী। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে মানসম্মত অটোমেশন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এদিকে বিকল দুটি মেশিন নিয়ে বিপাকে পড়া কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে আরও আধুনিকায়নের নামে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে দেড় কোটি টাকার নতুন বরাদ্দ চেয়েছে। নতুন বাজেট চাওয়ার কথা স্বীকার করলেও লাইব্রেরির অটোমেশন বিকল হয়নি বলে দাবি করেছেন লাইব্রেরিয়ান। তিনি বলছেন, ‘বিদ্যুৎ লাইনে কানেকটিংয়ে সমস্যার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে।’ পাশাপাশি নতুন অটোমেশন বিকল হতে পারে না বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। এখানে একাডেমিকসহ বিভিন্ন ধরনের ১০ হাজারের বেশি বই রয়েছে। শুরুতে এখান থেকে কার্ডের মাধ্যমে ম্যানুয়াল এন্ট্রি করে বই নিতেন শিক্ষার্থীরা। তারা বুক শাটারের সহযোগিতায় বিভিন্ন শেলফ খুঁজে বই বের করে ইস্যু রেজিস্টারের কাছে দিতেন। ক্লার্ক রেজিস্টার ডাটা এন্ট্রি করে বাড়িতে নেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ ১৫ দিন এবং হলে বা রিডিংরুমে পাঠ করার জন্য সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বই দিতেন। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে গত ডিসেম্বরে অনলাইন অটোমেশন সার্ভিস চালু করে কর্তৃপক্ষ। ৪০ লাখ টাকা খরচ করে স্থাপিত এ অটোমেশন সার্ভিস ১৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন। অটোমেশন মেশিনের সাহায্যে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে কাক্সিক্ষত বইয়ের অবস্থান শনাক্ত করতেন শিক্ষার্থী। এরপর বুক শাটার বই এনে ইস্যু রেজিস্টারের হাতে দিতেন। তিনি ডাটা এন্ট্রি করে চাহিদামতো বই দিতেন শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোনের মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে কাক্সিক্ষত বইয়ের অবস্থান বুক শাটারের কাছে জানাতেন। কিন্তু শীতকালীন বন্ধ শেষে ১ জানুয়ারি ক্যাম্পাস খোলার পর ৬ জানুয়ারি থেকে অটোমেশন সার্ভিসের দুটি মেশিন বিকল হয়ে যায়। একই সঙ্গে ওয়েবসাইটটিও বন্ধ হয়ে যায়। এতে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে তারা শেলফ খুঁজে পুরনো পদ্ধতিতে বই শনাক্ত করে কার্ডের মাধ্যমে তা এন্ট্রি করে সংগ্রহ করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক সহযোগী অধ্যাপক ড. ধীমান কুমার রায় বলেন, অটোমেশন মেশিনে কোনো সমস্যা হয়নি। মেশিনের পাওয়ার সাপ্লাইয়ে কিছুটা সমস্যা আছ। নতুন করে কানেকটিং দেওয়া হলে ঠিক হয়ে যাবে। একটা নতুন বিদ্যুৎ কানেকশন লাগাতে ১৫ দিন প্রয়োজন আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ছুটিতে বরিশালের বাইরে আছি।’ তিনি না থাকলে লাইব্রেরির কাজ বন্ধ থাকে কি না- জানতে চাইলে ড. ধীমান বলেন, ‘অটোমেশন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি আরও আধুনিকায়ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে নতুন করে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে লাইব্রেরি আধুনিকায়ন করা হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘টেকনিক্যাল কমিটির মূল্যায়ন প্রত্যয়নের মধ্য দিয়ে সরবরাহকারী ঠিকাদার নির্বাচিত করা হয়েছে। এত তাড়াতাড়ি অটোমেশন বিকল হওয়ার কথা নয়। বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা থাকলেও সেই ত্রুটি সারাতে এতদিন প্রয়োজন নেই।’

সর্বশেষ খবর