শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সাড়ে ৩ লাখ ছাড়িয়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত

ঝুঁকিতে শিশুরা, মারা গেছে তিনজন ♦ শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত ৬০ হাজার

জয়শ্রী ভাদুড়ী

সাড়ে ৩ লাখ ছাড়িয়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত

শীতে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। গত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ৩ লাখ ছাড়িয়েছে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। মারা গেছে তিনজন। আক্রান্তের অধিকাংশই শিশু। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। এ পর্যন্ত মারা গেছে ৮৬ জন।

রাজধানীর মহাখালী আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে প্রতিদিন ডায়রিয়া নিয়ে প্রায় ৩৫০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। তার মধ্যে ৬০%-৭০% শিশু রোগী, যার বেশির ভাগই পাঁচ বছরের কম বয়সী। চিকিৎসকরা জানান, দুই মাসের কম বয়সী শিশুদের শ্বাস নেওয়ার হার মিনিটে ৬০ বারের বেশি, দুই মাস থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুদের মিনিটে ৫০ বারের বেশি এবং ১২ মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুর মিনিটে ৪০ বারের বেশি শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে তাকে শ্বাসকষ্ট বলা হয়। এর সঙ্গে শিশুর বুকের পাঁজরের নিচের অংশ দেবে গেলে, জ্বর থাকলে, শ্বাস নেওয়ার সময় কোনো শব্দ হলে, বমি হলে তা নিউমোনিয়ার লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। ঠান্ডা, কাশি হলেই শিশুকে ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়ানো যাবে না। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ নভেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৩ লাখ ৫১ হাজার ১৭৩ জন। মারা গেছে তিনজন। ঢাকা বিভাগে আক্রান্ত ২ লাখ ৩২ হাজার ১৪৬ জন। ময়মনসিংহে আক্রান্ত ১৫ হাজার ১৮৫ জন, চট্টগ্রামে আক্রান্ত ৩৬ হাজার ৩৩৮ জন, রাজশাহী বিভাগে আক্রান্ত ১৫ হাজার ৯৫০ জন, রংপুর বিভাগে আক্রান্ত ১০ হাজার ৯৫৬ জন, খুলনা বিভাগে আক্রান্ত ২০ হাজার ৫৪ জন, বরিশাল বিভাগে আক্রান্ত ১১ হাজার ৭১২ জন এবং সিলেট বিভাগে আক্রান্ত ৮ হাজার ৮৩২ জন। ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে লক্ষ্মীপুরে একজন এবং চাঁদপুরে দুজন মারা গেছে।

স্বনামধন্য শিশু বিশেষজ্ঞ ও সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ সময় শিশুরা বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। তাই অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। শিশুরা অনেক সময় নোংরা হাত মুখে দেয়, এতে জীবাণু মুখে চলে যেতে পারে। শিশুদের খাওয়ানোর পাত্র পরিষ্কার না থাকলে, তাতে মাছি পড়লে কিংবা বাজারের কেনা দুধ ঠান্ডা অবস্থায় খাওয়ালে শিশুদের ডায়রিয়া হয়। এসব ডায়রিয়া ব্যাকটেরিয়া কিংবা ভাইরাসজনিত কারণে হয়ে থাকে। শীতে মৌসুমজনিত কারণেও শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়।’ অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘শিশুদের খাবারে পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখতে হবে। ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে, যাতে শরীরে পানি শূন্যতা তৈরি না হয়। এতেও যদি পায়খানা বন্ধ না হয় তাহলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত দুই মাসে শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ হাজার ৩১১ জন। এ রোগে মৃত্যুহার শঙ্কা বাড়াচ্ছে। এ পর্যন্ত মারা গেছে ৮৬ জন। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ইনস্টিটিউটে প্রতিদিন নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে গড়ে ২০ জন শিশু ভর্তি হচ্ছে। এ ছাড়া অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। শিশু হাসপাতালের মতো ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১০টি শিশু নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ঢাকার বাইরে থেকে যেসব রোগী আসছে তাদের অবস্থা বেশ জটিল। অভিভাবকদের অবহেলার কারণে ঢাকার অনেক রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পরে হাসপাতালে আসছে। ফলে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। এ ছাড়া অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীর নিউমোনিয়া বা শীতকালীন রোগ হলেও মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। তাই অন্য রোগ থাকলে তাদের শীতকালীন রোগগুলো যাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’

সর্বশেষ খবর