শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

২১ বছর পর স্বজনদের সন্ধান পেলেন খাদিজা

সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন, কিশোরগঞ্জ

দীর্ঘ ২১ বছর পর পরিবারের সন্ধান পেলেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বড়ভাগ গ্রামের খাদিজা। পাঁচ বছর বয়সে তার মা মারা যান। এক ভাই আর দুই বোনের মধ্যে খাদিজা মেজো। বড় বোন খুদেজা বোবা। টানাপোড়েনের সংসারে একমাত্র ছোট ভাই মাইদুলকে দেওয়া হয় দত্তক। ২০০১ সালে চাচা মঞ্জিল মিয়া খাদিজাকে নিয়ে যান ঢাকায়। মোহাম্মদপুর বস্তিতে গিয়ে ওঠেন। তখন তার বয়স ছয় বছর। বস্তিতে কয়েক দিন থাকার পর মোহাম্মদপুরে এক সাংবাদিকের বাসায় খাদিজাকে কাজের জন্য নিয়ে যান চাচা মঞ্জিল। ২০১৩ সালে বাসা বদল করে সাংবাদিক চলে যান আদাবর এলাকায়। তাদের সঙ্গে ভালোই দিন কাটছিল খাদিজার। তবে বাড়ির সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় তার। একদিন গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে রাগ করে খাদিজা বাসা থেকে বের হয়ে যান। বাসার নিচের গ্যারেজে সারা দিন থাকলেও কেউ তার খোঁজ নেয়নি। সন্ধ্যার পর আমিন নামে ছয়তলার এক বাসিন্দা আশ্রয় দেন খাদিজাকে। আশ্রয়দাতা ব্যক্তিটি খাদিজাকে নিয়ে যান তার লক্ষ্মীপুরের বাড়িতে। সেখানে কয়েক দিন থাকার পর আবারও ফেরেন আদাবরে। ফিরে এসে সাংবাদিকের বাসায় যেতে চাইলেও তারা তাকে গ্রহণ করেননি। নিজের বাড়ির ঠিকানাও তার মনে নেই। একপর্যায়ে মোহাম্মদপুরের এক মাদরাসায় খাদিজাকে ভর্তি করে দেন আশ্রয়দাতা আমিন। একদিন মাদরাসার প্রিন্সিপাল সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জৈনপুরী তার মুরিদ আলাউদ্দিনের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দেন। খাদিজা দেখতে সুন্দর হলেও ওই মুরিদ দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। নানা দিক চিন্তা করে অন্ধ আলাউদ্দিনের সঙ্গে বিয়েতে রাজি হন খাদিজা। ২০২১ সালের ৩০ জুন আলাউদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয় খাদিজার। বিয়ের পর স্বামী আলাউদ্দিনকে নিয়ে মোহাম্মদপুর ওয়্যারলেস গেট এলাকায় নতুন করে জীবন শুরু করেন খাদিজা। বর্তমানে জান্নাতুল ফেরদৌসী নাজ নামে সাত মাস বয়সী তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সাংবাদিকের বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই মূলত নিজের বাড়ি ও স্বজনদের কথা বিশেষ করে বোবা বড় বোনটির কথা বেশি মনে হতে থাকে তার। কিন্তু ঠিকানা জানা নেই। একপর্যায়ে ঢাকায় একটি ইউটিউব চ্যানেলে যোগাযোগ করে খাদিজা তার অতীত জীবনের ঘটনা খুলে বলেন। এটি ভাইরাল হলে খাদিজার বাড়ির লোকজনের নজরে পড়ে। চ্যানেলে খাদিজাকে দেখে তারা চিনতে পারেন। গত ১৮ জানুয়ারি বাড়ির লোকজন ঢাকায় গিয়ে নিয়ে আসেন খাদিজাকে। বাড়ি ছাড়ার সময় পিতা মারফত আলী জীবিত থাকলেও ফিরে এসে বাবাকে পাননি খাদিজা। ঢাকা থেকে ফিরে এসে ওঠেন নানার বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদরের কাটাবাড়িয়া গ্রামে। তার কথা শুনে অনেকেই ভিড় করেন এ বাড়িতে। বাবা-মায়ের কথা মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়েন খাদিজা। গতকাল বড়ভাগ গ্রামে গিয়ে খাদিজা তার মা-বাবার কবর জিয়ারত করেন। খাদিজা জানান, বাড়িতে ফিরতে পেরেছি, বাড়ির লোকজনকে পেয়েছি, এখন আর কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তবে পিতাকে শেষবারের মতো না দেখার বেদনা তার রয়েই যাবে। খাদিজা আরও জানান, ঢাকায় ফিরে গেলেও বাড়ির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ থাকবে। স্বামীকে নিয়েও মাঝে মধ্যে আসবেন এ বাড়িতে।

সর্বশেষ খবর