শনিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মাদকের সাম্রাজ্যে ঘুরেফিরে ওরা

মাদকসহ বারবার গ্রেফতার হয়েছেন হাজার জন

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

মাদকের সাম্রাজ্যে ঘুরেফিরে ওরা

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার আবুল হোসেন ওরফে হোসেন ড্রাইভার। ২০১৬ সালে মাদক বহনের সময় ফটিকছড়ি থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। জামিনে বের হয়ে রীতিমতো বনে যান মাদক ডন। পরের সাত বছরে মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন কমপক্ষে ১০ বার। প্রতিবারই জামিনে বের হয়ে ফের জড়িয়ে পড়েন মাদক ব্যবসায়। চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় এমন ছোটবড় ‘হোসেন ড্রাইভার’ রয়েছেন হাজারের মতো, যারা মাদকসহ গ্রেফতার হয়ে বারবার হচ্ছেন কারাবন্দি। আবার জামিনে মুক্ত হয়ে জড়িয়ে পড়ছেন মাদক ব্যবসায়। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতা বৃদ্ধির কারণে মাদকের মামলা ও আসামির সংখ্যা বাড়ছে। অভিযানগুলোয় মাদক মামলায় নতুন নতুন আসামি গ্রেফতারের পাশাপাশি পুরনো মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন করে গ্রেফতার হচ্ছেন। তাদের এ সংখ্যা নেহাত কম নয়।’ নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মাদকসহ গ্রেফতারদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসামির অতীতে মাদকসহ গ্রেফতার হওয়ার রেকর্ড থাকে। একবার মাদকসহ গ্রেফতার হওয়ার পর অনেকের মনে গ্রেফতার ও কারাগার-ভীতি চলে যায়। এরপর তাদের মধ্যে মাদকে সম্পৃক্ততা বেড়ে যায়। জামিনে মুক্ত হয়ে তারা মাদক বহন ও বিক্রির কাজে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন।

জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় তালিকাভুক্ত ছোটবড় মাদক ব্যবসায়ী রয়েছেন ২ হাজারের মতো। এর মধ্যে হাজারের মতো তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মাদক মামলা, যারা ক্যারিয়ার হিসেবে মাদকের অন্ধকার জগতে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু মাদকসহ গ্রেফতার হওয়ার পর তারা জড়িয়ে পড়েন মাদকের ভয়ংকর চক্রে। বিচারকাজ শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগায় মামলা পরিচালনার খরচ জোগাতে মাদক পরিবহন ও বেচাকেনাকে পেশা হিসেবে নিয়ে নেন তাদের সিংহভাগ। ফলে বাড়ছে মাদক ব্যবসায়ী ও মামলার সংখ্যা। মাদকের মামলা দ্রুত শেষ করতে না পারার একাধিক কারণ চিহ্নিত করেছেন চট্টগ্রাম বারের সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকার নেতা অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান। তিনি বলেন, মামলার তুলনায় বিচারকের অপ্রতুলতা, ভুল ব্যক্তিকে মামলায় সাক্ষী, মামলার আলামত নষ্ট হওয়া, যথাসময়ে মামলার সাক্ষীদের উপস্থিত না হওয়া, আসামির সঙ্গে বাদীর সমঝোতা, ত্রুটিপূর্ণ এজাহার, ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগপত্র প্রদান এবং সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সাক্ষ্য প্রদানে বিরত রাখা অন্যতম।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে বিভাগে ২৩ হাজার ৮৬৭টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭৫৫টি মামলায় ৪ হাজার ৪৫৯ জন গ্রেফতার হন। ২০২১ সালে ১৯ হাজার ৩০৩টি অভিযান পরিচালনা করে অধিদফতর। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৬২টি মামলায় গ্রেফতার করা হয় ৩ হাজার ৬৭৫ জনকে। ২০২০ সালে ১৪ হাজার ৮১১টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ২ হাজার ৯৮৮টি মামলায় ৩ হাজার ২৭৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৯ সালে ১৪ হাজার ১৩৬টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯টি মামলায় ৩ হাজার ১৪৯ জনকে আসামি করা হয়। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা যায়, বুধবার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দির সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৫৭৯। এর ৭০ শতাংশের বেশি মাদক মামলার আসামি। অথচ ২০১৫ সালে মোট বন্দির শতকরা হিসাবে মাদক মামলার আসামি ছিল ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর