সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সতর্ক আওয়ামী লীগ, মরিয়া বিএনপি

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

সতর্ক আওয়ামী লীগ, মরিয়া বিএনপি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজধানী ঢাকার নিকটতম জেলা গাজীপুরের পাঁচটি নির্বাচনী এলাকায় সংসদ সদস্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা চলছে। আসনগুলোয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেই একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা নানা হিসাব-নিকাশ করে পথ চলছেন। তবে আওয়ামী লীগে সম্ভাব্য প্রার্থী বেশি।

গত সংসদ নির্বাচনে জেলার পাঁচটি আসনের সবকটিতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হন। তারা এবারও প্রার্থী হবেন। বিএনপি আসনগুলো উদ্ধারে মরিয়া। বসে নেই জাতীয় পার্টিও। অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম তেমন একটা শোনা যায়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা ও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এসব খবর জানা গেছে।

গাজীপুর-১ : গাজীপুর-১ আসনে আগামী নির্বাচনে এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। একই চিত্র বিএনপিতেও।

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ২০০৮ সালে পৌর মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করে এ আসন থেকে তিনি সংসদ  সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি ২০১৪ ও ’১৮ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।  গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক এবারও এ আসনে আওয়ামী লীগের একজন শক্তিশালী মনোনয়নপ্রত্যাশী। কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রাসেল এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী। তার ছেলে ব্যারিস্টার চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীও প্রার্থী হতে পারেন। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মজিবুর রহমানও এবারের নির্বাচনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য মো. শরিফুল ইসলাম মনোনয়ন চাইতে পারেন। গাজীপুর-২ : যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল আওয়ামী লীগের সম্ভাবনাময় মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি ২০০৪, ২০০৯, ২০১৪, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের নামও শোনা যাচ্ছে। গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. হাসান উদ্দিন সরকার এ আসনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী। এ ছাড়া গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মো. সালাউদ্দিন সরকারও দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। জাতীয় পার্টির গাজীপুর মহানগর সভাপতি এম এম নিয়াজ উদ্দিন এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদীন ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মাহবুবুল আলম মামুনের নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। গাজীপুর-৩ : এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এখান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসনে কৃষক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক রুমানা আলী টুসির নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি বর্তমানে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের (৩১৪ নম্বর) সংসদ সদস্য। টুসি সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলীর মেয়ে। এখানে রহমত আলীর ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামিল হাসান দুর্জয়ের নামও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থী। এ ছাড়া শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান ফকিরের নামও প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আজাহারুল ইসলাম সরকার এবং গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব মো. কামরুজ্জামান মন্ডল। গাজীপুর-৪ : এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও বর্তমান সংসদ সদস্য বঙ্গতাজকন্যা সিমিন হোসেন রিমি। তিনি ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে উপনির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি এখান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আসন্ন নির্বাচনে একই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী সিমিন হোসেন রিমির ফুপাতো ভাই ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আলম আহমেদ। এ আসনে বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নান। তার পিতা প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়া এ আসনে কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির বর্তমান সদস্য মো. খলিলুর রহমান দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি এর আগে কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। এ আসনে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে কাপাসিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মো. সামসুদ্দিন খান মনোনয়ন চাইবেন। গাজীপুর-৫ : এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক। আর বিএনপির একক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য এবং দলীয় কেন্দ্রীয় মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি। ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে তিনি এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তার পিতা ময়েজউদ্দিন আহমেদ ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আসনটিতে আওয়ামী লীগের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক জিএস ও ভিপি, সাবেক সংসদ সদস্য ও গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আখতারউজ্জামান। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলটির গাজীপুর জেলা সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম ফজলুল হক মিলন। এ আসনে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খানের নাম শোনা যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর