শিরোনাম
সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ধাপে ধাপে বাড়বে বিদ্যুতের দাম

প্রতি মাসে মূল্য সমন্বয়ের চিন্তা

জিন্নাতুন নূর

এক লাফে না বাড়িয়ে এবার ধাপে ধাপে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কথা ভাবছে সরকার। এর আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্রাহক পর্যায়ে একবারে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানোর চিন্তা করেছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী আদেশে দাম বৃদ্ধির আগে মানুষের ওপর এর প্রভাব কেমন হবে সেই বিবেচনা করার কথা বলা হয়। এতে গত ১২ জানুয়ারি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, সরকার ধাপে ধাপে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করতে গিয়ে তা বিইআরসির সুপারিশকৃত ১৫ শতাংশকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তখন জনভোগান্তি আরও বৃদ্ধি পাবে।

সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বিদ্যুতের দাম একবারেই ১৫ থেকে ২০ ভাগ বৃদ্ধি করা হলে বাজারে পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। এ জন্য সরকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ধাপে ধাপে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করতে ইচ্ছুক। এতে জনজীবনে চাপ কিছুটা কম পড়বে।

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যদি সরকার ৫ শতাংশ হারে ধাপে ধাপে ১৫ শতাংশ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করে তবে সমস্যা নেই। বর্তমান বৈশ্বিক সমস্যায় ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি যৌক্তিক। ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি হলে গ্রাহকরাও মেনে নিত। কিন্তু ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে এটি ১৫ শতাংশের চেয়ে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। আশঙ্কা করছি যে, সরকার ৫ শতাংশ হারে মূল্য বৃদ্ধি করতে গিয়ে তা ২০ শতাংশের বেশি হারে মূল্য বৃদ্ধি হয়ে যাবে। এতে জনভোগান্তি বৃদ্ধি পাবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগামী মাস থেকেই আবারও বাল্ক ও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হবে। এক্ষেত্রে বাল্কে ১০ শতাংশ এবং গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি করা হবে। গত বছর বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে গিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-কে ২৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছিল। চলতি বছর ৪০ হাজার কোটি টাকা পিডিবির জন্য ভর্তুকি প্রয়োজন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এত বেশি পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলেই সরকার বিদ্যুৎ এবং জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করছে। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, সরকারের এখন আর মোটা ভর্তুকি টানার মতো সামর্থ্য নেই। আমরা ধাপে ধাপে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করতে চাই। মানুষের কষ্ট হবে জানি। একটু সহ্য করতে হবে। কিন্তু এ ছাড়া সরকারের হাতে আর কোনো অপশন নেই। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের যে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এ জন্য পিডিবির বিদ্যুতের দাম ২০ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পেল। আর পিডিবির কাছ থেকে দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো বিদ্যুৎ কিনছে। এতে এই সংস্থাগুলোরও ব্যয় ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেল। কিন্তু বিতরণ সংস্থাগুলো এই ২০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি করেনি। তারা যখন বিইআরসির কাছে মূল্য বৃদ্ধির আবেদন করেছিল তখন বিইআরসি কর্তৃপক্ষ তাদের ১৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির পরামর্শ দেয় এবং বাকি ৫ শতাংশ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নিজস্ব ব্যয় কমিয়ে তা সাশ্রয় করতে বলে। বিইআরসি সব পক্ষের কাছ থেকে শুনে বিচার-বিশ্লেষণ করে এই ১৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল। সরকার সে অনুযায়ী ১৫ শতাংশের বদলে ৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি করেছে। এই হিসাবে বিইআরসির বিচার সঠিক হলে বিদ্যুতের মূল্য আরও ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। এই বিবেচনায় গ্রাহকের ওপর যাতে বেশি চাপ না পড়ে সে জন্য ধাপে ধাপে এই মূল্য বৃদ্ধি করা হবে।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও সম্প্রতি বলেছেন, এখন থেকে প্রতি মাসেই অল্প অল্প করে বিদ্যুতের দাম বাড়াব। এতে মানুষের ওপর চাপ কম পড়বে। তিনি আরও জানান, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বাজারে বিদ্যুতের দাম প্রতি মাসে সমন্বয় করা হবে। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একবারে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে গ্রাহকদের ওপর চাপ পড়বে। এ জন্য গ্রাহকদের চাপ কমাতে সরকার ধাপে ধাপে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর