বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

চার আসনে জয় চায় দুই দলই

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

চার আসনে জয় চায় দুই দলই

ফরিদপুর জেলার চারটি সংসদীয় আসনেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির একাধিক নেতা মাঠে রয়েছেন। দুই দলেরই একাধিক নেতা প্রার্থিতা প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। একে অন্যকে টেক্কা দিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন কেউ কেউ। পুরনো মুখের পাশাপাশি বড় দুই দলেই একাধিক নতুন মুখ আলোচনায় রয়েছেন।

ফরিদপুর জেলার চারটি আসনই দখলে রেখেছে আওয়ামী লীগ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রার্থীদের নির্বাচিত করবেন বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিকল্প এ দেশে আর কোনো দল নেই।

ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব  এ কে এম কিবরিয়া স্বপন বলেন, বিএনপি বর্তমানে নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না। বিএনপির প্রধান ভাবনা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি অবশ্যই অংশ নেবে এবং চারটি আসনেই আমাদের প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন। দলীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফরিদপুরের চারটি আসনে ঘর গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর থেকেই নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছেন দলের নেতারা। বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলার পাশাপাশি আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটের রায় তাদের অনুকূলে আনতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছেন দলীয় নেতারা। বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রচার করা হচ্ছে দলীয় সভা-সমাবেশগুলোয়। অন্যদিকে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি ভিতরে ভিতরে নির্বাচনী প্রস্তুতিও নিচ্ছে বিএনপি। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় থেকে দলীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক, মতবিনিময় সভা করছেন। দীর্ঘ এক যুগ পর ঘোষণা করা হয়েছে ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। যদিও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি দলটি। তার পরও সরকার পতনের আন্দোলনের পাশাপাশি ভিতরে ভিতরে দলের নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

ফরিদপুর-১ (মধুখালী-আলফাডাঙ্গা-বোয়ালমারী) : এ আসনটি মূলত আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিগত দিনের নির্বাচনগুলোয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে এসেছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য মঞ্জুর হোসেন। তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান। এলাকায় তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় আরও রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন, দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সিরাজুল ইসলাম, মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, হোমিওপ্যাথি বোর্ডের চেয়ারম্যান দিলীপ রায়, আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য সৈয়দ শামীম রেজা প্রমুখ। এ ছাড়া গুঞ্জন রয়েছে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া। বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। এ ছাড়া কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলাম মনোনয়ন চাইবেন।

ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা-কৃষ্টপুর ইউনিয়ন) : আসনটি দুটি উপজেলা ও একটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও প্রয়াত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া। শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া এলাকায় বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া। সেই সময় তার পক্ষে এ আসনের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী সমর্থন দিয়েছিলেন। পরে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে জামাল হোসেন মিয়া মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। আগামী নির্বাচনে তিনি দলের পক্ষে মনোনয়ন চাইবেন বলে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মেজর (অব.) আ ত মা হালিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জুয়েল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ মিয়া। বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে মাঠে রয়েছেন দলের সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমানের কন্যা, ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল। বিএনপির এ দুই শীর্ষ নেতা এলাকায় থেকে নানা কর্মসূচি পালন করছেন।

ফরিদপুর-৩ (সদর) : এ আসনটি সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের নির্বাচনগুলোয় এ আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে এটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। বর্তমানে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নানা নাটকীয়তা চলছে। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। দীর্ঘ আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে তিনি রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছেন। তার সংসদ সদস্য পদটিও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

এ আসন থেকে নির্বাচন করতে মাঠে নেমেছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে এখন পর্যন্ত আর কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না। বিএনপি থেকে এ আসনে নির্বাচন করতেন বিএনপির প্রয়াত ভাইস প্রেসিডেন্ট চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। তার মৃত্যুতে এ আসনে নির্বাচন করতে মাঠে রয়েছেন চৌধুরী কামাল ইউসুফের কন্যা, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। কামাল ইবনে ইউসুফের ব্যক্তিগত ইমেজ ও বিএনপির বেশ ভোট রয়েছে এ আসনে।

ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) : এ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। তবে বিগত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহ হেরে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর কাছে। আওয়ামী লীগ কিংবা অঙ্গ সংগঠনের কোনো পদে না থেকেও দুই দুবার বিজয়ী হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন নিক্সন চৌধুরী। বর্তমানে তিনি আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। এবার তিনি আওয়ামী লীগ থেকেই মনোনয়ন চাইবেন- এমনটি তিনি একাধিক সভা-সমাবেশে বলেছেন। এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি কাজী জাফরউল্ল্যাহও। বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন পেতে মাঠে কাজ করছেন ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলমগীর কবির। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে নির্বাচন করতে মাঠে রয়েছেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর