রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় দ্রুত চার্জশিট দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় কমিশন গঠনসহ সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলার ঘটনায় দ্রুত চার্জশিটের দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। গতকাল সকালে মহানগর নাট্যমঞ্চে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের ‘জাতীয় হিন্দু সম্মেলন-২০২৩’ অনুষ্ঠানে এ দাবি জানানো হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের ইতিহাস একই সূত্রে গাঁথা। আলাদা দুটি ভূখণ্ড সত্ত্বেও দুই দেশের জনগণের সংস্কৃতি ও পরম্পরাও অভিন্ন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীর সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বেরও রজতজয়ন্তী পূর্ণ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে। সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আগত হিন্দু মহাজোটের চার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থকের জন্য মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করে দেশের বৃহত্তম শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা। এ জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ ও গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন হিন্দু নেতারা। সম্মেলনে অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘স্বাধীন দেশে এখনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাঝেমধ্যে দুর্বৃত্তরা আক্রমণ করে। এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করি। আমি লজ্জিত যে পূজার সময় মন্দিরে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়। এসব হামলায় যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এই দীর্ঘসূত্রতা আমাকে লজ্জা দেয়। সরকারকে আহ্বান জানাই, এসব মামলায় দ্রুত চার্জশিট দিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিন।’ তিনি বলেন, সংবিধান থেকে সব সাম্প্রদায়িকতা মুছে দিয়ে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রদায়িক আস্ফালনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ করে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘আপনারা সংখ্যালঘু নন। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সবাই আমরা এ দেশের নাগরিক। সবাই আমরা ভাই ভাই। উপাসনালয় ও মন্দিরে হামলার ঘটনার মামলায় দ্রুত চার্জশিট দিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ বাংলাদেশ। আমাদের সবার শিক্ষা, সংস্কৃতি এক ও অভিন্ন। হিন্দু, মুসলমানের চেয়ে আমাদের বড় পরিচয় আমরা সবাই বাঙালি। সব সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে আমরা যে উন্নত বিশ্বের স্বপ্ন দেখি তা কখনো সম্ভব হবে না। আমরা আপনাদের (সনাতন ধর্মাবলম্বী) দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরব।’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক, হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী প্রমুখ এতে বক্তব্য দেন। সভাপতির বক্তব্যে আয়োজক সংগঠনের সভাপতি বিধান বিহারী গোস্বামী বলেন, ‘সংসদে সংখ্যা অনুপাতে আসন চাই আমরা। এটি আমাদের একমাত্র দাবি। আমাদের কথাগুলো সংসদে বলতে না পারলে সমস্যাগুলোও নিবারণ করতে পারব না।’ সম্মেলনে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সস্প্রদায়ের ওপর হামলা হলেও প্রতিবাদ হয়েছে নামমাত্র। জাতীয় সংসদে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্যের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। এ জন্য সংখ্যানুপাতিক তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংসদীয় আসন নির্ধারণ করতে হবে।

 

সর্বশেষ খবর