শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

আদালত বর্জনের মধ্যেই ২১ আসামি জামিনে মুক্ত

♦ আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কারাবন্দিদের স্লোগান ♦ নাজির মোমিনুলকে বদলি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

আইনজীবীদের আদালত বর্জনের মধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির মো. মোমিনুল ইসলামকে চাঁদপুর জেলা জজ আদালতে বদলি করা হয়েছে। তার এই বদলিকে আইনজীবীরা আন্দোলনের সুফল হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, নাজিরের বদলির মধ্য দিয়ে তাদের দাবির এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। তবে আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশাসনিক কারণে তার বদলির আদেশ হয়েছে। বুধবার প্রশাসনিক কারণ উল্লেখ করে নাজির মো. মোমিনুল ইসলামকে বদলি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। একই আদেশে চাঁদপুর আদালতের নাজির মো. ছানাউল্যা তালুকদারকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বদলি করা হয়েছে।

এদিকে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন করায় ওই আদালতের কোনো বিচারিক কাজেই অংশ নেননি। তবে আদালতের একটি সূত্র জানায়, ১ জানুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইনজীবী ছাড়া বিচারপ্রার্থীদের শুনানিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালত থেকে ২১ আসামি জামিনে মুক্ত হয়েছেন, যার মধ্যে পাঁচজন শিশু রয়েছে। বিষয়টিকে আইনজীবীরা আইনসম্মত নয় উল্লেখ করলেও আদালতের দাবি, আইনসম্মত দিক বিবেচনা করেই জামিন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর ভূঁইয়া জানান, বিচারপ্রার্থীরা ইচ্ছে করলে নিজের মামলা নিজে মুভ করতে পারেন। কিন্তু বেইল বন্ড ছাড়া হাকিম রিলিজের অর্ডার দিতে পারেন না। বেইল বন্ড ছাড়া হাকিম কীভাবে রিলিজ অর্ডার দেন- এটা আইন সম্মত নয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য না শুনে বিচারক জামিন দিতে পারেন না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘পেশকার ও পিয়নরা আইনজীবীদের পাশ কাটিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব জামিন করিয়ে দিচ্ছেন। নাজিরের অপসারণে আমাদের এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। আইনমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির আলোকে এখন ওই দুই বিচারকের অপসারণ হলেই আমাদের আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে। এখন আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বসার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে দাবি থেকে আমরা সরে আসব না।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, আইনজীবীদের পক্ষ থেকে জামিন চাওয়া হলে তখন বেইল বন্ড দাখিলের শর্ত পূরণ করতে হয়। যখন পক্ষ নিজেই আসে তখন তার পক্ষে এসব শর্ত প্রযোজ্য নয়। সাদা কাগজের ওপর সরকারি স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি লাগিয়ে জমা দিলে বিচারকের স্বাক্ষরের মাধ্যমে জামিন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এখানে লেনদেনের কোনো প্রশ্নই আসে না। এদিকে দীর্ঘদিন আইনজীবীরা আদালত বর্জন অব্যাহত রাখায় দূরদূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন কারাবন্দিরা। সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ফটক ও হাজতখানায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে কারাবন্দি নিয়ে একটি প্রিজন ভ্যান জেলা কারাগার থেকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের ফটকে যায়। কারাবন্দিরা ভ্যান থেকে নামার সময় আইনজীবীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন। পরে পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হাজতখানায় প্রবেশ করান। হাজতেও তারা স্লোগান দিতে থাকেন।

সর্বশেষ খবর