মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

নদীতে বেড়েছে বোরোর আবাদ

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

নদীতে বেড়েছে বোরোর আবাদ

উত্তরের সীমান্ত জেলা হিমালয়ান সমতল অঞ্চল খ্যাত পঞ্চগড়ের নদনদীগুলোয় বেড়েছে বোরো ধানের আবাদ। জমিহীন কৃষকেরা হাঁটু পানির এ নদীগুলোতে বাঁধ দিয়ে চর এলাকায় বোরোর আবাদ করছেন। সেচ খরচ নেই বলে উৎপাদন খরচ কম। অন্যদিকে পলিমিশ্রিত উর্বর জমি হওয়ার কারণে ফলনও হচ্ছে ভালো। ফলে কৃষকের লাভ বেশি। কিন্তু সার কীটনাশকের ব্যবহার, স্রোত আটকে চাষাবাদের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। স্থানীয়দের দাবি, চাষিদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নদীগুলো খনন করে পুরনো পরিবেশ ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।

পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছোট-বড় ৪৬টি নদী। পরিসংখ্যান মতে, এত নদী অন্য কোনো জেলায় প্রবাহিত হয়নি। এ নদীগুলোর উৎপত্তি হিমালয় পাহাড় এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সমতল অঞ্চল। প্রায় সাতটি নদীর উৎপত্তি এই জেলার বিভিন্ন গ্রামে। নদীগুলো প্রাচীনকাল থেকে এই জেলার কৃষি, অর্থনীতি, পর্যটন এবং পরিবেশগত উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে নদীগুলো ভরাট হয়ে বিলীন হওয়ার পথে। দখল এবং অপরিকল্পিতভাবে পাথর ও বালি উত্তোলনের ফলেও কয়েকটি নদী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এ নদীগুলোতে বর্তমানে বোরোর আবাদ বাড়ছে। গত কয়েক বছর ধরে নদীর চর ও স্রোতে বাঁধ দিয়ে স্থানীয় কৃষকরা বোরো ধান রোপণ করছেন। চাষাবাদের জমি নেই এমন কৃষকেরা এই আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। তারা বলছেন, বর্ষাকালে নদীতে প্রচুর পানি থাকে। তখন কোনো আবাদ হয় না। আর শুকনো মৌসুমে নদী শুকিয়ে যায়। তাই এ সময়ে তারা নদীতে আইল বেঁধে, জমি চাষাবাদের উপযোগী করে বোরো ধানের আবাদ করছেন। এ আবাদে তাদের সেচ দিতে হয় না। বোরোর ফলনও ভালো হয়। এক বিঘা জমিতে প্রায় ২০ থেকে ৩০ মণ ধান পান তারা। মাঝিপাড়া এলাকার মশিউর রহমান জানান, ডাহুক নদীর পাড়েই আমার বাড়ি। চাষাবাদ করার মতো জমি নেই। নদীতে চর পড়েছে। এই জমি বোরো ধানের আবাদের জন্য তৈরি করছি। প্রতি বছর ৫০ শতক জমিতে বোরো ধান লাগাই। ২৫ থেকে ৩০ মণ ধান পাই । তা দিয়ে বছরে ঘরের ধান হয়ে যায়। শুধু বোরো নয়, কিছু এলাকায় অন্যান্য ফসলও আবাদ হচ্ছে। পিঁয়াজ, ভুট্টা, বাদামসহ নানা ধরনের শাকসবজিও আবাদ হচ্ছে। কৃষকেরা অগ্রহায়ণ মাস থেকে নদী কেটে জমি প্রস্তুত করেন। মাঘ থেকে ফাল্গুন মাসে বোরোর চারা রোপণ করেন। জ্যৈষ্ঠ মাসে বোরো ধান কেটে ঘরে তোলেন। তবে বোরো আবাদের ফলে কৃষকেরা লাভবান হলেও হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, সার কীটনাশকের ব্যবহার ও নদীতে বাঁধ দিয়ে আবাদের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি মাছসহ জলজ কীটপতঙ্গ। দেখা মিলছে না নদীকেন্দ্রিক জীবনযাপন করা পাখিদের। স্থানীয়রা বলছেন, নদীগুলো প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে। তারা চায় নদীগুলো খনন করা হোক। স্থানীয় পরিবেশকর্মী কাজী মখছেদুর রহমান জানান, নদীগুলোর সীমানা নির্ধারণ করে দ্রুত খনন করা দরকার। যে যার মতো আবাদ করছে। চরগুলোতে আবাদ হলে সমস্যা নেই। কিন্তু নদীর স্বাভাবিক গতিপথ আটকে আবাদ করার ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না। এ ঘোষণাকে সফল করতে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করছি। এবার এ জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। নদীতে বোরো চাষিদের জীববৈচিত্র্য ঠিক রেখে আবাদ করার জন্য সচেতন করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর