শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
বাজেটের আকার কাটছাঁট

এডিপি ও আয় কমছে ২৬৫০০ কোটি টাকা

২০২৪-২৫ অর্থবছর স্বাভাবিক হবে- এম এ মান্নান

শাহেদ আলী ইরশাদ

বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) বাজেটের আকার সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। কাটছাঁট করা হচ্ছে ২৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কমিয়ে আনা হচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্প ও আয়ের লক্ষ্য। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, বছর শেষে আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৫০০ কোটি এবং আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার কোটি টাকা কমানো হচ্ছে। তবে কর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে আগের ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকাই। আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকার উন্নয়নের রূপরেখা দিয়েছিল সরকার। মাঝপথেই তা কাটছাঁট করতে হচ্ছে। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার হতে পারে ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ কমানো হচ্ছে বিদেশি সহায়তা থেকে। মূল এডিপিতে বিদেশি সহায়তা ধরা হয়েছিল ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এখান থেকে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমে ৭৪ হাজার ৫০০ কোটি হতে পারে। এজন্য এডিপিতে থাকা প্রকল্পের সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে। প্রকল্পের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা। গত বছরের ২২ নভেম্বর একনেক সভার দুই মাস পর চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি একনেক সভা হয়। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রকল্পের গতি ও সংখ্যা কমানো হয়েছে। আগে প্রতি মঙ্গলবার একনেক সভা হতো। এখন দু-তিন মঙ্গলবার বাদ দিয়ে এক মঙ্গলবারে একনেক সভা করি। প্রকল্পের সংখ্যা কমিয়েছি। এ অর্থবছর পার হতেই হবে। জুন পর্যন্ত। দেখবেন আগামী বাজেটে কিছু প্রতিচ্ছায়া থাকবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাব।’ চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আয়ের লক্ষ্য কমছে মাত্র ৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। যেটা প্রস্তাবিত বাজেটে ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা অপরিবর্তিত থাকছে।

এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়ের লক্ষ্য সাধারণত সরকার সংশোধন করে না। তাদের ধারণা সংশোধন করলে কর্মকর্তাদের চাপ কমে যাবে, রাজস্ব আয় আরও কমে যাবে। তিনি আরও বলেন, গত রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৭ ভাগের মতো। চলতি অর্থবছরের সাত মাসের রাজস্ব আয়ের হিসাবে এ প্রবৃদ্ধি ১১ ভাগে পৌঁছাতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থাকবে রাজস্ব আয়ে। শুধু উন্নয়ন ব্যয়ই নয়, কমানো হয়েছে সরকারের পরিচালন খরচও। মোট ব্যয়ের আকার ধরা হয়েছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা মতো। বাজেটে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে ৯৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা; যা আগের চেয়ে ১ হাজার কোটি টাকা বেশি। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ধরা হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আগে ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর