সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রচারে আওয়ামী লীগ দাবি নিয়ে মাঠে বিএনপি

নেয়ামত হোসেন, চাঁদপুর

প্রচারে আওয়ামী লীগ দাবি নিয়ে মাঠে বিএনপি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুরের পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা যাতায়াত শুরু করেছেন। বর্তমানে জেলার সবকটি আসনই আওয়ামী লীগের দখলে। আসন্ন নির্বাচনে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় দলটি। আর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি সবগুলো আসনেই জয়লাভে আশাবাদী। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, চাঁদপুরে সব আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

মাঠপর্যায়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে চলছে পাওয়া না-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ। আবার বিএনপিকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগও আছে। তবে সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনেই থাকবে বিএনপি।

চাঁদপুর-১ (কচুয়া) : আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এ আসন থেকে তিনবার নির্বাচিত হলেও আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেতে আরও দুজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত রয়েছেন। গত নির্বাচনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেন মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবার যোগ হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ। তারা নিয়মিত এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক ও দলীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নিজেদের তুলে ধরছেন। বর্তমানে এই আসনে ত্রিমুখী অবস্থানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

গত নির্বাচনে বিএনপি থেকে মালয়েশিয়া প্রবাসী মোশারফ হোসেন মনোনয়ন পেলেও তিনি নামমাত্র অংশ নিয়ে পরবর্তীতে আর এলাকায় আসেননি। মনোনয়ন পাননি দুবারের সাবেক এমপি, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন।                

৩৬টি মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘ কারাভোগ করা এই নেতা পরবর্তীতে তার স্ত্রী মহিলা দলের সহ-সভানেত্রী নাজমুন নাহার বেবীকে নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলেন। এবারের নির্বাচনে এই আসন থেকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন চাইবেন নাজমুন নাহার বেবী।

চাঁদপুর-২ (মতলব) : এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল আমিন রুহুল। তিনি এলাকায় সরকারি ও সামাজিক কর্মকান্ডে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে চলছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দলীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক এমপি-মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। তাঁর বড় ছেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য সাজেদুল রহমান দীপু চৌধুরীও নিয়মিত এলাকায় যাচ্ছেন। একইভাবে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এলাকায় সরকারি ও সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত রয়েছেন। 

এ আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. জালাল উদ্দিন ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেও এলাকায় প্রচারণা চালাতে গিয়ে এক প্রকার গৃহবন্দী হয়ে পড়েছিলেন। জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি, মতলব উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শরীফ মাহমুদ ফেরদৌস শাহীন এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া সাবেক সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত নুরুল হুদার ছেলে তানভীর হুদা, ব্যারিস্টার ওবায়েদুর রহমান টিপু বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। 

চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) : এ আসনে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার মেয়াদকালে নদীভাঙন রক্ষায় বাঁধ, ডিপ্লোমা মেরিন একাডেমি, মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন হয়েছে। তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিটি ইউনিয়নে নিয়মিত উঠান বৈঠক ও সমাবেশ শুরু করেছেন।

একই এলাকার বাসিন্দা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তিনিও মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, দলীয় সাবেক উপ-কমিটির সদস্য জাকির হোসেন মারুফ, মৎস্যজীবী লীগ নেতা রেদওয়ান খান বোরহানের নামও মনোনয়নের আলোচনায় রয়েছে।

বিএনপি থেকে এই আসনে দলের কেন্দ্রীয় প্রবাসী কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি কারা নির্যাতিত শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক গত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক সাড়া পান। তিনি আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়াও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তফা খান সফরী ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান শাহিন সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থেকে তৃণমূলে কর্মীদের উজ্জীবিত রেখেছেন। জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মহীসন খান। গত নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ছিলেন দলের জেলা সভাপতি জয়নাল আবেদীন শেখ। এবারও তিনি প্রার্থী হবেন। করোনা মহামারিতে মৃত ব্যক্তিদের দাফন কাজে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে ব্যাপক আলোচিত হন। চাঁদপুর শহর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মো. শাহজাহান মিয়া জানান, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তিনিই প্রার্থী হবেন। মনোনয়ন চাওয়ার পদ্ধতি তাদের দলে নেই।

চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) : এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান। অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য সাবেক এমপি ড. সামসুল হক ভূইয়া এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ অব্যাহত রেখেছেন। এলাকায় তাকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা আছে। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমান আওয়ামী লীগের অন্যতম মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন দলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং ও রাজস্ববিষয়ক সম্পাদক, সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ, ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ হান্নান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোতাহার হোসেন পাটওয়ারী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা আব্বাস উদ্দিন, কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন নসু, ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শরীফ মুহাম্মদ ইউনুস।

চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তী) : আগামী নির্বাচনে মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম দলীয় মনোনয়ন পেতে নিয়মিত এলাকায় সরকারি ও সামাজিক সব কর্মকান্ডে অংশগ্রহণে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। তিনি চারবারের সংসদ সদস্য। তিনি সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে এলাকার জনগণকে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের ১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি তিনি। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের চেয়ারম্যান, আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ হোসাইন দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এ আসনে বিএনপির দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক দলের বাইরেও জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য। ২০০৮ সালের নির্বাচনে  লক্ষাধিক ভোট পেয়ে সাড়া জাগিয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কেন্দ্র ঘোষিত দলীয় সব কর্মসূচি ও সামাজিক কর্মকান্ডে তিনি নিয়মিত অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর