মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যবস্থা

দালালের তিন প্যাকেজ

♦ এনআইডি করতে দেড় লাখ ♦ পাসপোর্টসহ প্যাকেজ ৩ লাখ ♦ অন্য দেশে পাঠানো ৬ লাখ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দালালের তিন প্যাকেজ

বাংলাদেশি এনআইডি-পাসপোর্ট পেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের জন্য দালাল চক্রের রয়েছে তিনটি প্যাকেজ। চুক্তির দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ৫-৬ লাখ টাকার বিনিময়ে একজন রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট গ্রহণ করে চলে যান দেশের বাইরে। এ সিন্ডিকেটে পাসপোর্ট ও নির্বাচন কমিশন অফিসের কয়েক কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, দালাল চক্র তিনটি প্যাকেজে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে চুক্তি করে। সেগুলা হলো- শুধু এনআইডি তৈরি, এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরি এবং এনআইডি-পাসপোর্ট তৈরির পাশাপাশি দেশের বাইরে পাঠানো। শুধু এনআইডি তৈরির জন্য ১ লাখ থেকে দেড় লাখ, পাসপোর্ট তৈরিসহ প্যাকেজ আড়াই লাখ থেকে ৩ লাখ, সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ অন্য দেশে পাঠানোর জন্য নেওয়া হয় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা।

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক তারিক সালমান বলেন, ‘আমার অফিসের কোনো কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত, এমন তথ্য জানা নেই। দালাল সিন্ডিকেটের বিষয়েও তথ্য নেই আমাদের কাছে।’

এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি নিয়ে কাজ করা সিএমপির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পাসপোর্ট ও নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তার সহায়তা ছাড়া কোনো দালালের একার পক্ষে পাসপোর্ট এবং এনআইডি তৈরি সম্ভব নয়। তদন্তে দালাল চক্রের সঙ্গে একাধিক কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকায় রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করছেন। যাচাই-বাছাই করে শিগগিরই তাদের গ্রেফতারের আওতায় আনা হবে।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতিতে জড়িত চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বেশ কিছু চক্র। এসব চক্রের নেপথ্যে রয়েছেন অনেক রাঘববোয়াল। এর মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাঁচ ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, পটিয়া ও হাটহাজারী উপজেলার কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান। তারা টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের জন্ম ও জাতীয়তা সনদ প্রদান করেন। আরও জানা গেছে, ক্যাম্পভিত্তিক দালাল চক্রের সদস্যরা এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরিতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে জাতীয়তা সনদ সংগ্রহ করেন। এরপর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এনআইডি তৈরি করেন। এনআইডি তৈরি হওয়ার পর চট্টগ্রামের পাঁচলাইশসহ অন্যান্য আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে তৈরি করেন পাসপোর্ট। জন্মসনদ জালিয়াতির একটি মামলা তদন্ত করছে সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এ জালিয়াতির বিষয়ে অতিরিক্ত উপকমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘জালিয়াতি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য আমরা পেয়েছি। জালিয়াতি চক্রের অনেক হোতার নাম উঠে এসেছে তদন্তে। মামলার স্বার্থে এ মুহূর্তে তা প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর