বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

জুনে জাতীয় গ্রিডে মাতারবাড়ীর বিদ্যুৎ

শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক উৎপাদন, সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ

মুহাম্মদ সেলিম, মাতারবাড়ী (কক্সবাজার) থেকে ফিরে

জুনে জাতীয় গ্রিডে মাতারবাড়ীর বিদ্যুৎ

মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কক্সবাজারের মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আগামী ডিসেম্বরে যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। এরই মধ্যে দেশের বৃহৎ এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে, যা আগামী জুনে পরীক্ষামূলকভাবে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই পুরোদমে শুরু হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন।

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশের (সিপিজিসিবিএল) নির্বাহী পরিচালক (প্রকল্প) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮০ শতাংশ। এখন টেস্টিং কমিশনিং করছি। আগামী এপ্রিলে ৮০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে মাদার ভেসেল আসবে। ওই কয়লা দিয়ে ফায়ারিং শুরু করব। জুন মাসে পরীক্ষমূলকভাবে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেব। ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোদমে চালু হবে।’

সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত মহেশখালীর দ্বীপ ইউনিয়ন মাতারবাড়ী। এ ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকায় লোনাপানি জমিয়ে লবণ উৎপাদন হতো সিংহভাগ এলাকায়। এ এলাকার ১ হাজার ৬০০ একর লবণভূমিতে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কুতুবদিয়া চ্যানেলঘেঁষা উপকূলীয় এলাকাটিতে রাত-দিন বিরামহীন কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছেন দেশি-বিদেশি হাজার হাজার প্রকৌশলী ও শ্রমিক। বর্তমানে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮০ শতাংশ। পুরোদমে উৎপাদনে গেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দৈনিক খরচ হবে ১০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা, যার জন্য এরই মধ্যে ৮০ হাজার টন কয়লা নিয়ে আসা মাদার ভেসেল ভিড় করতে তৈরি করা হয়েছে জেটি। জেটিতে মাদার ভেসেল ভেড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে ৩০০ মিটার প্রস্ত এবং ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার লম্বা চ্যানেল। নাব্য নিশ্চিত করার জন্য সেডিমেন্টেশন মিটিগেশন ডাইক করা হয়েছে। এতে করে ড্রেজিংয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে চ্যানেলটি। মাদার ভেসেল থেকে মাত্র দেড় থেকে দুই দিনের মধ্যে খালাস হবে কয়লা, যা সরাসরি গিয়ে জমা হবে সাইলোতে। এতে করে সময় ও পরিবহন ব্যয় দুটোই কমবে। কয়লা মজুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশালাকৃতির সাইলো, যাতে কমপক্ষে ৬০ দিনের কয়লা মজুদ রাখা যাবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে লাইফটাইম অ্যাশপন্ড, যার মধ্যে একটি অ্যাশপন্ডের আয়তন ৯০ একর, আরেকটি ৬০০ একর। কয়লা মজুদের জন্য ৮০ একর জমিতে কোল ইয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাস থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে রক্ষা করতে নির্মাণ করা হচ্ছে ১৪ মিটার উঁচু বাঁধ। বাঁধের ভিতরে অবস্থিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবকাঠামো থাকছে ১০ মিটার উঁচু, যা ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সর্বোচ্চ উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের চেয়ে ৪ মিটার উঁচু। বাঁধের উচ্চতা থাকছে এর দ্বিগুণ। প্রসঙ্গত, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি জন্য ২০১৪ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে ঋণচুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি ৩ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে দেবে জাইকা। বাকি ৭ হাজার ৯৩৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার ও সিপিজিসিবিএল নিজস্ব তহবিল থেকে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর