মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঘাটতি ও ভর্তুকির চাপ অর্থনীতিতে

মানিক মুনতাসির

ঘাটতি ও ভর্তুকির চাপ অর্থনীতিতে

সরকারের বাৎসরিক আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ সব সময়ই বেশি। তবে করোনা মহামারির পর শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে যে বৈশ্বিক মন্দা চলছে তা কবে শেষ হবে কেউই বলতে পারছেন না। ফলে সরকারের আয় আরও কমে গেছে। অথচ ব্যয় বেড়েছে। ফলে বছর শেষে সরকারের বাজেট ঘাটতি আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মানুষের দৈনন্দিন ব্যয়ও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ হারে। এতে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিও চাপের মুখে পড়েছে। তবে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে বাজেট সহায়তার অংশস্বরূপ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার অর্থ বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান হিসেবে পাওয়ার প্রত্যাশা করছে সরকার। এতে হয়তো বাজেট ঘাটতির চাপ কিছু কমতে পারে। অবশ্য ডলার সংকট মোকাবিলায় আইএমএফের অনুমোদিত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে শুরু করেছে সরকার। এদিকে বাজেট ঘাটতি ও ভর্তুকি কমাতে মূল্য সমন্বয়ের পাশাপাশি রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। এর অংশ হিসেবে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।

বাজেট ঘাটতি ও ভর্তুকি কমাতে মূল্য সমন্বয়ের পাশাপাশি রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার আশা করছে সরকার। ২০২৩-২৪ বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াতে পারে পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকা, যা বর্তমান বাজেটে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা

জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ঘাটতি ধরে, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থছরের সাত মাস ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে। তবে কাগজে-কলমে হিসাব রয়েছে পাঁচ মাসের (জুন-অক্টোবর)। এ সময়ে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় বৈদেশিক উৎস থেকে ১ লাখ ৩ হাজার ৪৬ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ কোটি ৪১ লাখ ৮১৮ কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। এতে বৈদেশিক ঋণ হিসেবে ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৬ হাজার কোটি ও অনুদান হিসেবে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধের লক্ষ্য ঠিক করা হয়। এদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যমতে, বৈদেশিক সহায়তা ও ঋণ চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে গত অর্থবছরের তুলনায় ১০ শতাংশ অর্থ ছাড় কম হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ও সহায়তা বাবদ ৩৭৮ কোটি ৫ লাখ ডলার পেয়েছে, যা গত অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৯ কোটি ডলার কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এ খাতে এসেছিল প্রায় ৪১৭ কোটি ডলার। তবে অর্থ ছাড় কম হলেও এ সময় বেড়েছে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ। সূত্র জানায়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সরকারের সব ধরনের আয় কমে গেছে। এ জন্য ভর্তুকি কমাতে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আসছে বাজেটে আর্থিক খাতে আরও ব্যাপক সংস্কার আনতে যাচ্ছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) রাজস্ব সংগ্রহে ভাটার টান অব্যাহত রয়েছে। সময় যতই যাচ্ছে ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে চলেছে। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম পাঁচ মাসে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৭১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর আগে অক্টোবর পর্যন্ত ঘাটতি ছিল সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। সাত মাস পর সেটা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। জুলাই-জানুয়ারি এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। সংকট উত্তরণে প্রতিষ্ঠানটির আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগ থেকে নতুন উদ্যোগের কথা বলছেন তারা। যদিও করোনা মহামারি পরবর্তী চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আইএমএফ আমাদের যেসব সংস্কারের কথা বলেছে সরকার যদি তার অর্ধেকও আমলে নেয় অর্থনীতিতে দারুণ এক পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে রাজস্ব খাতের যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছে সেগুলো খুবই কার্যকর। এগুলো আমাদের আরও আগেই করা উচিত ছিল। আমরা তা পারিনি। এখনো যদি করতে পারি তবে বাজেট ঘাটতি কমাতে তা সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন। সূত্র জানায়, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সরকারের সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঘাটতি কমাতে ও আয় বাড়াতে আগামী বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আরও বড় হচ্ছে। আগামী বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্য দেওয়া আছে। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বড় পার্থক্য থাকায় নতুন বাজেটে সরকারকে বিভিন্ন উৎস থেকে ধার করতে হচ্ছে। আসছে ২০২৩-২৪ নতুন বাজেটে ঘাটতি প্রাথমিকভাবে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। চলতি বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি বাড়ছে ১৯ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। তবে শেষ পর্যন্ত নতুন বাজেটের ঘাটতি দাঁড়াতে পারে পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকা এমনটাই ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর