শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
পাঁচজনকে গ্রেফতার সিআইডির

জন্ম ও মৃত্যুর ভুয়া সনদ তিন হাজার, জড়িত কর্মচারী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন অধিদফতরের সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে অন্তত ৩ হাজার ভুয়া সনদ তৈরি করা হয়েছে। গত ছয় মাসে বার্থ অ্যান্ড ডেথ রেজিস্ট্রেশন ইনফরমেশন সিস্টেম (বিডিআরআইএস) সার্ভারে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে হাজার হাজার টাকার বাণিজ্য হয়েছে।

এই ভুয়া জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রস্তুতকারী চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা হলেন- মাহবুব আলী, শাহ আলম, হাসান তারেক, কোহিনুর সুলতানা ও ফয়সাল। এদের মধ্যে তারেক ও কোহিনুর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মচারী।

গতকাল সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন অধিদফতরের রেজিস্ট্রার জেনারেল রাশেদুল ইসলাম সিআইডিতে একটি আবেদন পাঠান। ওই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন- অবৈধ বিকল্প পদ্ধতিতে কে বা কারা জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে সনদ প্রস্তুত করছে। তাদের চিহ্নিতকরণ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। এই কাজে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্যান্য অফিসেও অসাধু কর্মচারীরা সক্রিয়ভাবে জড়িত আছে। তাদেরও চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিআইডি বলছে, তাদের সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করে। ভুক্তভোগীদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী ‘জন্মনিবন্ধন হেল্প ডেস্ক’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়েছে- একদিনেই দেশের যে কোনো জেলার জন্ম ও মৃত্যুসনদ সংগ্রহ করুন। পরবর্তীতে সিপিসি রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে ফেসবুক গ্রুপের দুজন অ্যাডমিন মাহবুব আলী ও শাহ আলমকে গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া তথ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল-৪ এর স্প্রেম্যান হাসান তারেক এবং ভ্যাকসিনেটর কোহিনুর সুলতানা নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের গ্রেফতারের সময় সেখানে জন্মনিবন্ধনের জন্য ভুয়া কাগজপত্রসহ ফাইল জমা দিতে আসা চক্রের আরেক সদস্য ফয়সালকেও গ্রেফতার করা হয়। এ সময় জন্মসনদ, জন্মসনদ তৈরির ভুয়া কাগজপত্রসহ ৮টি ফাইল, ৩টি হার্ডডিস্ক, ৪টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। সিআইডির সিপিসি জানায়, চক্রটি ফেসবুকের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশ থেকে লোভনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট সংগ্রহ করে এবং ফয়সাল তার দোকানে ফরম পূরণ করতে আসা ক্লায়েন্টদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ভুয়া তথ্য সংযোজন করে জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট তৈরির ফাইল তৈরি করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল-৪ এর দুই কর্মচারীর কাছে জমা দিত। প্রতিটি ফাইলের বিপরীতে ৫৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা করে দিত। যদিও জন্মনিবন্ধনের সরকারি ফি মাত্র ৫০ টাকা। এই কাজে তারা দেশের সব জেলা থেকে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল-৪ এর আওতাধীন এলাকার একটিমাত্র বিদ্যুৎ বিলের কাগজ সব আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিত। অনেক ক্ষেত্রে মিরপুরের একটি স্কুলের ট্রান্সক্রিপ্ট এডিট করে সেখানে শুধু ছাত্র কিংবা ছাত্রীর নাম, পিতার নাম পরিবর্তন করে একই রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরে ট্রান্সক্রিপ্ট একাধিক আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিত। এই কাগজ কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই চক্রটিকে জন্মসনদ দেওয়া হতো। আর উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল-৪ এর দুজন কর্মচারী অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আইডি পাসওয়ার্ড নিয়ে সার্ভারে প্রবেশ করে ভুয়া তথ্যসংবলিত আবেদনপত্রে জন্ম অথবা মৃত্যু নিবন্ধন সার্টিফিকেট ইস্যু করে মাহবুব আলী ও ফয়সালকে সরবরাহ করত।

সর্বশেষ খবর