বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

কিডনি প্রতিস্থাপনে যত চ্যালেঞ্জ

মোস্তফা কাজল ও জয়শ্রী ভাদুড়ী

কিডনি প্রতিস্থাপনে যত চ্যালেঞ্জ

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী কামাল হোসেন দুই বছর ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত। সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিসের কষ্ট আর খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কাটছে তার দিন। কিডনি প্রতিস্থাপনে আশার আলো খুঁজতে গিয়ে সেখানেও মুশকিল। তিনি বলেন, ‘প্রথমে কিডনি পেতে খুব সমস্যা হচ্ছিল। নিকটাত্মীয়ের কিডনি ম্যাচিং হলে এখন প্রতিস্থাপনের খরচ জোগাড় করতে পারছি না। দেশে সব মিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ হবে, অন্য দেশে গেলে এ খরচ পড়বে ৩৫ লাখ টাকা। হাসপাতালগুলো শুধু কিডনি প্রতিস্থাপনের সময় যে খরচ হয় সেটার হিসাব দেয়। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের পর ওষুধ, পথ্য, চিকিৎসায় আরও প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়।’

প্রতি বছর দেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ কিডনির বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এসব রোগীর মধ্যে ৪০ হাজার রোগীর কিডনি বিকল হয় প্রতি বছর। এ পরিস্থিতিতে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ কিডনি সবার জন্য, অপ্রত্যাশিত দুর্যোগের প্রস্তুতি, প্রয়োজন ঝুঁকিপূর্ণদের সহায়তা।’

বাংলাদেশ রেনাল ফাউন্ডেশনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে ৮৫ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে ২৪ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), সিকেডি ও বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে সফলতার সঙ্গে কিডনি প্রতিস্থাপনের কার্যক্রম চালু আছে। বিএসএমএমইউর ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ডায়ালাইসিস করালে কিডনির মূল ফাংশন কাজ করে। সব ফাংশন করাতে ট্রান্সপ্লান্টের বিকল্প নেই। ট্রান্সপ্লান্টের জন্য বড় অন্তরায় হলো আমাদের দেশে এ বিষয়ে প্রচার নেই। দ্বিতীয়ত কিডনি দাতা নেই। এটা সফল করতে সবার সহযোগিতা লাগবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশে ট্রান্সপ্লান্ট করাতে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ হয়। অথচ বিদেশে গেলে এই খরচ ৩৫ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করাতে দেশ থেকে বিদেশে দাতা নিয়ে যান। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রহিম শেখ বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে কিডনি রোগে ভুগছি। আমার দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতি সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালাইসিস করাই। আমার মা আমাকে কিডনি দিতে চান। কিন্তু কিডনি দেওয়ার জন্য অস্ত্রোপচার করতে যে খরচ হবে তা আমাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। সে কারণে আমার কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট এখন থমকে আছে।’ সম্প্রতি মরণোত্তর কিডনি প্রতিস্থাপনে আশার আলো দেখা দিয়েছে। সারাহ ইসলাম নামের এক তরুণী কিডনি ও কর্ণিয়া দান করেছেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘নৈতিকতার দিক থেকে কিডনি বেচাকেনা কোনো দেশই গ্রহণ করে না। উন্নত বিশ্বেও এটা ভলান্টারিভাবে হয়। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে গেলে প্রথম দরকার কিডনির সহজলভ্যতা। কিডনি না পাওয়া গেলে ট্রান্সপ্লান্ট করা কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু বিদেশে কোনো ডোনার নিয়ে গেলে তারা অত বেশি নৈতিকতা দেখে না। তারা ডোনার ও অর্থ পেলে ট্রান্সপ্লান্ট করে দেয়। সম্প্রতি দেশে মরণোত্তর কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে। এটাকে ইতিবাচকভাবে প্রচার করে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ বলেন, ডায়ালাইসিসের চেয়ে ট্রান্সপ্লান্ট গুরুত্বপূর্ণ। একজন রোগীর ট্রান্সপ্লান্ট সফল হলে তিনি সুস্থ জীবন পেতে পারেন। বেসরকারি উদ্যোগে অনেকেই এখন ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করছেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এবাদুর রহমান বলেন, ‘দেশে ডায়ালাইসিস চিকিৎসা যারা নিচ্ছেন তারা মোট কিডনি রোগীর মাত্র ২০ ভাগ। বাকি রোগীরা চিকিৎসার আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে আরও ৫০ ভাগ চার-ছয় মাসের বেশি চিকিৎসা চালাতে পারছেন না। কারণ, কোনো সরকারি অনুদান নেই। পুরোটাই রোগীকে বহন করতে হয়। যে রোগীরা আসছেন না তারা হয়তো মারা যাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘পাঁচ ভাগ রোগী কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করছেন। তারা ভালো জীবনযাপন করছেন। আমাদের কিডনি চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা অর্থনৈতিক। কারণ, রোগীরা খরচ চালাতে পারে না। এটা অনেক ব্যয়বহুল চিকিৎসা।’

 

সর্বশেষ খবর