বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ

অবহেলা ছিল রক্ষণাবেক্ষণে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেড’ প্লান্ট যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া প্লান্টে উপেক্ষিত ছিল নিরাপত্তা নির্দেশনাও। সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, গাফিলতিসহ ৯ কারণে ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয়। এতে বহু হতাহত হয়। ক্ষতি হয় শত কোটি টাকারও বেশি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তাপসী ঘোষ রায় বলেন, ‘রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ রক্ষণাবেক্ষণে কিছু নিরাপত্তা গাইডলাইন অনুসরণ করতে হয়। যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা হলে ভয়ংকর হয়ে তা ধ্বংসাত্মক রূপ নিতে পারে। অক্সিজেন প্লান্ট বিস্ফোরণের অন্যতম কারণ হতে পারে যথযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা এবং নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুসরণ না করা।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত ও পরিবেশ রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুমন গাঙ্গুলী বলেন, ‘প্রতিটা রাসায়নিক কারখানায় যন্ত্রপাতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হয়। অক্সিজেন প্লান্ট বিস্ফোরণের প্রাথমিক কারণ মনে হচ্ছে সঠিন রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা গাইডলাইন অনুসরণ করা হয়নি। ধারণা করছি অক্সিজেন প্লান্টের অনেক আগে থেকে লিকেজ ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সেদিকে নজর ছিল না। ফলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।’ জানা যায়, সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের প্লান্ট যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি দীর্ঘদিন। এ ছাড়া বিস্ফোরণের ৯টি কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে রয়েছে অনভিজ্ঞদের দিয়ে প্লান্ট পরিচালনা। অক্সিজেন প্লান্টটি ২০১৮ সালে আধুনিকায়ন করা হয়। এতদিন প্রশিক্ষিত কর্মীদের মাধ্যমে প্লান্ট পরিচালনা করা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অভিজ্ঞ কর্মীকে ছাঁটাই করে কর্তৃপক্ষ। যাদের মাধ্যমে অক্সিজেন প্লান্ট পরিচালনা করা হচ্ছিল তারা তুলনামুলক অনভিজ্ঞ ছিলেন। এ রাসায়নিক কারখানায় অক্সিজেন উৎপাদনে নিরাপত্তা গাইড যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। যে কলাম দিয়ে সিলিন্ডারে অক্সিজেন রিফিল করা হয় তা ছিল লিক। গ্যাস নিয়ন্ত্রণ ভাল্বে ত্রুটি, সিলিন্ডারের ভিতর ফাটল, অক্সিজেন সেপারেশন কলামে অক্সিজেনের চাপ বেড়ে যাওয়া, অক্সিজেন রিফিলে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অবহেলা, সঠিকভাবে প্লান্টের যন্ত্রাংশের রক্ষণাবেক্ষণ না করা এবং কারখানার ভিতর কার্বন-ডাই অক্সাইড ও দাহ্য পদার্থ নাইট্রোজেন সিলিন্ডার মজুদ করা। এসব কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে বাতাস পৃথককরণ প্লান্ট থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়েছে। এরই মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন সিলিন্ডার পাওয়া গেছে, যেগুলো রাখার অনুমোদন ছিল না।’ চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, অক্সিজেন প্লান্টে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল কি না তাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’ প্রসঙ্গত, শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় সীমা অক্সিজেন প্লান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সাতজন নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে ৩০ জন। আহতদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শত কোটি টাকা। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন।

সর্বশেষ খবর