বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

জনসংখ্যায় নারী বেশি, ভোটার কম

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবারের জনশুমারিতে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি থাকলেও ভোটার তালিকায় দেখা গেছে বিপরীত চিত্র। ছবিসহ ভোটার তালিকা শুরুর পর থেকে নারী-পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান থাকলেও হালনাগাদে নারী ভোটারদের সাড়া মিলেছে কম।

১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে এখন প্রায় ১২ কোটি ভোটার। চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা ১৭ লাখ ৪০ হাজার বেশি। অথচ জনশুমারিতে নারী বেশি রয়েছে ১৬ লাখ ৩৪ হাজার। বিশ্লেষকরা বলছেন, জনসংখ্যায় যেহেতু নারীর সংখ্যা বেশি, স্বাভাবিকভাবে নারী ভোটারও বেশি থাকার কথা। কিন্তু বাড়ি বাড়ি গিয়ে ব্যাপক প্রচারের অভাব, নানা প্রতিবন্ধকতা, প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের মধ্যে আগ্রহ বা সুযোগের অভাব ভোটার সংখ্যায় ওই উল্টো চিত্রের কারণ ঘটাতে পারে। যদিও নারীদের ভোটার করা নিশ্চিতে স্থানীয় মহিলা জনপ্রতিনিধি, বিশেষ করে জেলা, উপজেলা, সিটি, পৌর ও ইউপির সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের সহযোগিতা নেওয়া হয়।

 

নারী ভোটার কম : অনাগ্রহ নাকি প্রতিবন্ধকতা?

দেশে এখন ভোটার ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন, যারা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। মোট ভোটারের মধ্যে ৬ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫৭২ জন পুরুষ, ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯ জন নারী এবং ৮৩৭ জন হিজড়া। জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন, নারী সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। আর হিজড়া আছেন ১২ হাজার ৬২৯ জন। গত ২৭ জুলাই প্রকাশিত প্রাথমিক প্রতিবেদনে মোট জনসংখ্যা দেখানো হয় ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। পরে ৬ ফেব্রুয়ারি বিআইডিএসের পর্যালোচনায় জনসংখ্যা বেড়ে হয় ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সর্বশেষ ২০১১ সালের শুমারিতে ১৪ কোটির বেশি জনসংখ্যায় পুরুষের চেয়ে কম ছিল নারীর সংখ্যা। সে সময় পুরুষ ছিলেন ৭ কোটি ২১ লাখ ৯ হাজার ৭৯৬ জন, নারী ছিলেন ৭ কোটি ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ৯০১ জন। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলেন, ২০০৭-০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ শুরু করার পর থেকে ‘নির্ভুলভাবে ও উৎসাহব্যঞ্জকভাবে’ সেই কাজ চলছে। কিন্তু প্রতি বছর বা নির্দিষ্ট সময় পরপর হালনাগাদের সময় ব্যাপক ও কার্যকর প্রচার দরকার। জনসংখ্যায় ১৭ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা যদি বেশি হয়, তাহলে সেটা ভোটার তালিকায় নারীর সংখ্যা কম হওয়ার একটা কারণ হতে পারে। তবে সার্বিকভাবে ভোটার হতে নারীদের ‘অনাগ্রহ’কেই বড় কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। ইসির কর্মকর্তারা বলেন, প্রবীণ অনেকেই রয়েছেন, যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, এনআইডি সেবা নিচ্ছেন না, ভোটারও হতে চায় না। ভোট নিয়ে আবার অনেকের রয়েছে গোলযোগ ভীতি, এক ধরনের অনাস্থা রয়েছে, তাদের ভোটার হতেও আগ্রহ থাকে না। নারী ভোটার কম হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘শুধু নারী নন, আমাদের চেষ্টা নারী-পুরুষ ভোটারযোগ্য সবাইকে ভোটার করার। ভোটার হতে অনাগ্রহ রয়েছে এমন বিষয় না থাকলেও কিছু কুসংস্কার রয়ে গেছে অনেক এলাকায়। চাঁদপুরের একটি এলাকায় তো নারীরা ভোট দিতে যান না বলে সবার জানা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।’ বাড়ির বাইরে বিভিন্ন কাজে গেলেও চাঁদপুরের দক্ষিণ রূপসা ইউনিয়নের নারীরা ‘প্রায় অর্ধশতাব্দী’ ধরে ভোট দেন না। ইউনিয়নটির জনপ্রতিনিধিদের ভাগ্য নির্ভর করে পুরুষ ভোটারদের ওপর। এমনকি সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরাও নির্বাচিত হন শুধু পুরুষদের ভোটে।

সর্বশেষ খবর