রবিবার, ১২ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

তিন দিনের বিজনেস সামিট শুরু

২০৪০ সালে বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিন দিনের বিজনেস সামিট শুরু

এক্সিলারেটিং দ্য ট্রিলিয়ন ডলার জার্নি স্লোগানে শুরু হয়েছে তিন দিনের বাংলাদেশ বিজনেস সামিট। সামিটে বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতা, নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর প্রধানরা অংশগ্রহণ করেন। তিন দিনব্যাপী বিজনেস সামিটের প্রথম দিন গতকাল অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরা হয়। সম্মেলন উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) তাদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সহযোগিতায় (বিডা) এফবিসিসিআই এ সম্মেলনের আয়োজন করছে।

গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘আশা করা হচ্ছে ২০৩৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।’ ‘সব সাফল্যের ওপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ এখন ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ মধ্য-আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তর হতে চায়। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য’, বলেন তিনি। তিনি বলেন, এই রূপকল্প অর্জনের জন্য তাঁর সরকার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫ প্রণয়ন করেছে। সেখানে বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের একটি কৌশলগত পথরেখা প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি প্রতি বছর গড়ে ৫ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে আশা করা হচ্ছে ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশে এখন জ্বালানি, পানি, লজিস্টিকস ও পরিবহন খাতে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবকাঠামো গড়ার সুযোগ রয়েছে।’ তিনি বলেন, তাঁর সরকার ৩৮টি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করছে, যেগুলো বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে আপনাদের উপস্থিতি দেখে আমি উচ্ছ্বসিত। আমি বিশ্বাস করি যে এ ইভেন্টটি ব্যবসায়িক ধারণা আদান-প্রদান, পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশে নতুন ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টির জন্য একটি চমৎকার প্ল্যাটফরম হিসেবে কাজ করবে।’ সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সৌদি আরবের বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল-কাসাবি, ভুটানের বাণিজ্য, শিল্প ও কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী কার্মা দর্জিয়া, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল অ্যাম্ব. জিয়াংচেন জ্যাং, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠনের প্রতিনিধিসহ দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী নেতা। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এর মিডিয়া পার্টনার দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। সম্মেলনে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আরিরাতসহ ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সিইও এবং ২ শতাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী, বিশ্বের ১৭টি দেশের ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নিচ্ছেন। বাংলাদেশের অর্জন এবং রপ্তানি ও স্থানীয় ভোক্তাবাজারের পাশাপাশি বিনিয়োগ সক্ষমতা বিদেশিদের কাছে তুলে ধরা হবে। গতকাল ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের (সিসিপিইটি) সঙ্গেও সমঝোতা স্মারক সই হয় এফবিসিসিআইয়ের।

বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব : সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি বলেছেন, সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে বিনিয়োগ এবং রংপুর চিনিকলের জায়গাটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে রূপান্তর হবে। সেখানে গ্যাসলাইন সংযোগে সৌদি আরব বিনিয়োগ করবে। এ ছাড়া আরবি ভাষা ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হবে বলেও জানান তিনি।

দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল : বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) উপমহাপরিচালক অ্যাম্ব. জিয়াংচেন জ্যাং মনে করেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পর বাণিজ্যে অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে। আরও বৃহৎ আকারের অর্থনীতি হওয়ার জন্য বাংলাদেশের সামনে অনেক সুযোগ রয়েছে। এ দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সবচেয়ে বেশি দরকার বেসরকারি বিনিয়োগ।

চীনা ঋণের ফাঁদে পড়বে না বাংলাদেশ : বাংলাদেশ কখনই চীনা ঋণের ফাঁদে পড়বে না জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বেশির ভাগ ঋণ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংগঠন থেকে নেওয়া। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চীনা ঋণের ফাঁদে পা দিয়েছে এটা ভুল কথা। দেশভিত্তিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয় জাপান থেকে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে। কিন্তু বাংলাদেশ চীনা ঋণের ভারে কুঁজো নয়।’

আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে : বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি হয় ৬০ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর পর তা ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে সিএনএনের বিজনেস বিভাগের সম্পাদক রিচার্ড কোয়েস্টের পাঁচ বছর পর বাংলাদেশের অবস্থান কেমন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা নেই। যুদ্ধের কারণে অস্থির বিশ্ববাজারের ফল ভোগ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। সব দেশ যেখানে সংকটের মধ্যে আছে, সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বাড়ছে। বাজারে পণ্যের দাম বেশি এ কথা সত্য। তবে সংকট সামাল দিতে বাংলাদেশ সক্ষম। শিক্ষা খাতে ঝরে পড়ার হার নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু সাধারণ শিক্ষা না, বাংলাদেশ টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষার দিকে জোর দিচ্ছে। বাংলাদেশের লক্ষ্য একটি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা।

সর্বশেষ খবর