রবিবার, ১২ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হলো না প্রীতির

নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হলো না প্রীতির

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় লেগুনার ধাক্কায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম প্রীতি রানী দাস (৩৫)। গতকাল বেলা দেড়টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে, পৃথক ঘটনায় মুগদায় মরিয়ম বেগম (৪৫), যাত্রাবাড়ীতে মারিয়া বেগম (৬৫) এবং শাহবাগে ৪০ বছর বয়সী অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাদের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

নিহত প্রীতি রানীর পরিবার ও পুলিশ বলছে, প্রীতি রানীর মেয়ে তমা অন্তঃসত্ত্বা। শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার কাজলায় মেয়ের বাসায় আসেন প্রীতি রানী। শনিবার দুপুরে মেয়েকে নিয়ে তিনি স্থানীয় একটি ক্লিনিকে যাচ্ছিলেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে একটি যাত্রীবাহী লেগুনা তাকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

প্রীতি রানীর মেয়ে তমা রানী দে বলেন, আমার চোখের সামনে মাকে লেগুনার চালক ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যান। আমার মায়ের এমন মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। আমি লেগুনাচালকের ফাঁসি চাই। আমি অসুস্থ থাকায় আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এই যাওয়াই আমার জীবনের কাল হয়ে গেল, মাকে চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেললাম- এসব বলে আর্তনাদ করতে থাকেন তমা।

প্রতিবেশী রতন শিকদার বলেন, প্রীতি রানীদের বাসার অদূরে কাজলা ডক্টরস ল্যাবের সামনে সড়কের পাশ দিয়ে প্রীতি রানী, তার মেয়ে তমা ও তমার দুই বছরের ছেলে পথিক চন্দ্রসহ হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময়ে ডেমরা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রাবাড়ীগামী একটি লেগুনা ওভারটেকিং করতে যায়। লেগুনাটি প্রীতি রানীকে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন এবং পরে মারা যান। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুল হক বলেন, লেগুনাটি জব্দ করা হয়েছে। চালককে ধরতে অভিযান চলছে। এদিকে, যাত্রাবাড়ী থানার এসআই আবদুল্লাহ আল হাসিব বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া এলাকায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা ধাক্কায় পথচারী মারিয়া বেগম গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে তিনি মারা যান। স্বজনদের বরাদ দিয়ে এসআই আবদুল্লাহ বলেন, মারিয়া বেগম একটি দাওয়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে এসে শনিরআখড়া এলাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় একটি অটোরিকশা তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায়। বর্তমানে বংশালে থাকতেন। মুগদা থানার এসআই রেজাউল করিম খান জানান, গতকাল সকালে মুগদার দক্ষিণ মান্ডা বাদশা মিয়া লেনের একটি টিনশেড বাসা থেকে মরিয়ম বেগমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লালমাই উপজেলায়। তার স্বামী আবদুস সালাম ও স্বজনদের বরাত দিয়ে এসআই রেজাউল বলেন, মরিয়ম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। শুক্রবার দুপুরে আবদুস সালাম তাকে বাসায় রেখে গ্রামে যান। শনিবার সকালে মরিয়মের ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় বাড়ির মালিক ডাকাডাকি করেন। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে টিনের বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। এদিকে, শাহবাগ থানার এসআই মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, গতকাল দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশের ফুটপাত থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার গায়ে হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরিহিত ছিল। তার বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মৃত ব্যক্তি ভবঘুরে প্রকৃতির ছিলেন। অসুস্থজনিত কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে।

সর্বশেষ খবর