রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দুই দলের

আওয়ামী লীগের মূলনীতি টাকা পাচার দুর্নীতি : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের মূলনীতি টাকা পাচার দুর্নীতি : ফখরুল

সারা দেশে মহানগরী পর্যায়ের সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের মূলনীতি, টাকা পাচার আর দুর্নীতি। তারা এই রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করেছে। এই সরকারকে জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে সরে যেতে বাধ্য করা হবে। তারপর রাষ্ট্রকে সংস্কার করতে হবে।’ ‘সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা’ বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ১২টি (সাংগঠনিক) মহানগরে বিএনপি এ প্রতিবাদ সমাবেশ করে। বিএনপির এই কর্মসূচি ঘিরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও পাল্টা কর্মসূচি ডাকা হয়। রাজধানীর নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বিশেষ অতিথি ছিলেন। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির আরও পাঁচজন সদস্য বিভিন্ন মহানগরের সমাবেশে যোগ দেন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, খুলনায় ড. আবদুল মঈন খান, কুমিল্লায় নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রংপুরে সেলিমা রহমান। এ ছাড়া সিলেটে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহম্মদ, বরিশালে এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, গাজীপুরে বরকতউল্লা বুলু, ফরিদপুরে মোহাম্মদ শাহজাহান, রাজশাহীতে অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ময়মনসিংহে শামসুজ্জামান দুদু। নয়াপল্টনের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে নিচ্ছে। ব্যাংকিং খাতকে লুট করে একেবারে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে টুকরো করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা লুট হয়ে গেছে। এই রাষ্ট্রকে এখন সংস্কার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায় না, জনগণের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। এই সরকারকে জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে সরে যেতে বাধ্য করা হবে।’ মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু সমাবেশ পরিচালনা করেন। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বকুল, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, মহিলা দলের সভানেত্রী মির্জা আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবী, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঢাকা মহানগর উত্তর (আদাবর থানা) বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ, মহানগর বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেন খোকন, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি নেতা মকবুল হোসেন সরদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের আহ্বায়ক সুমন ভূইয়া ও সদস্য সচিব বদরুল আলম সবুজ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) : সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ‘সময় থাকতে সচেতন হোন। তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে জনগণকে রেহাই দিন। গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিন। সুশাসন ও ন্যায়বিচার কায়েম করুন। অন্যথায় সামনে বিপদ অপেক্ষা করছে।’ গতকাল রাজধানীর পূর্ব পান্থপথে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।

সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট : গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জোটের প্রধান সমন্বয়কারী ও বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, ‘এই অবৈধ সংসদ ভেঙে একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে দেশব্যাপী দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’

গণফোরাম : ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও দুঃশাসন থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়’ বলে দাবি করেছেন গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু। সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আরামবাগে গণফোরাম চত্বরে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ দাবি করেন তিনি।

১২ দলীয় জোট : ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও যৌক্তিক দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মানতে বাধ্য হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। সেই সঙ্গে অবিলম্বে রমজান মাসে বাজারে পণ্যমূল্য জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার দাবি জানান তারা। রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কের পেছনে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, এনডিপি চেয়ারম্যান কারি আবু তাহের, ইসলামী ঐক্যজোটের অধ্যাপক আবদুল করিম, বাংলাদেশ ন্যাপ ভাসানীর অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, জমিয়তের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ।

সমমনা জোট : ‘নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটের আন্দোলন চলবে’ বলে জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। গতকাল রাজধানীর বিজয়নগরে আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে এক সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা জানান তিনি।

বাংলাদেশ লেবার পার্টি : ‘দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ চোখে শর্ষে ফুল দেখছে’ মন্তব্য করে সংগঠনের চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেছেন, দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণি এখন সর্বহারা শ্রেণিতে পরিণত হয়েছে। পুরানাপল্টন মসজিদ চত্বরে বাংলাদেশ লেবার পার্টি-ঢাকা মহানগর আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। বিভিন্ন মহানগর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বরিশাল : ‘সুপ্রিম কোর্টের বিতর্কিত নির্বাচন দেখে এই সরকার সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন দেবে বলে বিশ্বাস হয় না’ বলে উল্লেখ করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী। গতকাল দুপুরে বরিশাল নগরীর সদর রোডের দলীয় কার্যালয় চত্বরে মহানগর বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

রাজশাহী : বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন, ‘রোজার মধ্যে, ঈদের মধ্যে, বর্ষাতেও বিএনপির আন্দোলন চলবে। শেখ হাসিনা যতদিন ক্ষমতা ছাড়বেন না, ততদিন বিএনপির আন্দোলন চলছে চলবে।’ কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকালে রাজশাহীর ভুবন মোহন পার্কে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।

রংপুর : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, ‘বিএনপি বেঁচে থাকতে দেশে একদলীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের রক্তের সম্পর্ক হলেও এ পর্যন্ত উত্তরের জীবন রেখা তিস্তার পানি আনতে পারেনি। অথচ ফেনী নদীর পানি চুক্তি করে দেশকে পানিশূন্য করার পরিকল্পনা করছে সরকার।’ বিকালে রংপুর জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর বিএনপির আয়োজনে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

ময়মনসিংহ : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে আমরা নির্বাচন করতে চাই। কিন্তু সে নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে হবে না। হবে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে।’ সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর হরিকিশোর রায় রোডের বিএনপি দলীয় কার্যালয় সংলগ্ন সড়কে ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে মহানগর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

খুলনা : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, ‘দেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোট হলে আওয়ামী লীগ ১০ শতাংশ ভোটও পাবে না। সরকার সারাক্ষণ উন্নয়নের কথা বলে অথচ জনগণের ভোটকে ভয় পায়। জনগণকে ভয় পায় বলেই দিনের ভোট রাতে করেছে।’ তিনি খুলনায় কে ডি ঘোষ রোডে বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে ১০ দফা দাবিতে সমাবেশে এসব কথা বলেন।

সর্বশেষ খবর