শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রাইভেট না পড়ায় শিক্ষার্থীকে মারধর ভিডিও ভাইরাল

মাদারীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুরে প্রাইভেট না পড়ায় মো. জিহাদ নামে নবম শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত রমজান মোল্লা সদর উপজেলার মোস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অতিথি শিক্ষক। বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র জিহাদকে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকালে মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শিফটে পরীক্ষা চলাকালে সহপাঠীর সঙ্গে কথা বলার জেরে ওই শিক্ষক ছাত্রের খাতা কেড়ে নেন। এ সময় উত্তরপত্র কিছুটা ছিঁড়ে গেলে ওই শিক্ষার্থী প্রতিবাদ জানায়। এতে শিক্ষক রমজান মোল্লা ক্ষিপ্ত হয়ে উত্তরপত্র পুরোপুরি ছিঁড়ে ফেলেন এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে জামার কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে মাঠের মধ্যে নিয়ে আসেন। ভাইরাল হওয়া ১৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, অভিযুক্ত রমজান মোল্লা এক শিক্ষার্থীর জামার কলার ধরে মারতে মারতে মাঠের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। পেছনে ছাত্রছাত্রীরা জড়ো হয়ে তাকে অনুসরণ করছে। নির্যাতিত ছাত্র জিহাদ খান জানান, ‘পরীক্ষা দেওয়ার সময় সহপাঠীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। রমজান স্যার দেখে ফেলায় তিনি এসে আমার খাতা নিয়ে যান। আমি প্রতিবাদ জানালে তিনি খাতাটা পুরোপুরি ছিঁড়ে আমার জামার কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে মাঠের মধ্যে নিয়ে আসেন এবং কিল-ঘুষি দিতে থাকেন। এ সময় একই ক্লাসে পড়ুয়া শিক্ষকের ছেলে এসে আমাকে মারতে থাকে। আমি তারপর বাড়ি চলে যেতে চাইলে সে আমাকে ল্যাং মেরে মাঠের মধ্যে ফেলে দেয়। তারপর টেনে লাইব্রেরিতে নিয়ে তিনি আমাকে বেদম মারধর করেন। আমার অপরাধ আমি তার কাছে প্রাইভেট পড়িনি। যারা তার কাছে প্রাইভেট পড়ে তিনি তাদের নকল করার সুযোগ দেন। প্রাইভেট না পড়লে তাদের বিভিন্ন অজুহাতে মারধর করেন।’ প্রত্যক্ষদর্শী জিহাদের সহপাঠী আরমান বলেন, ‘রমজান স্যার। সেদিন পরীক্ষার হলে জিহাদকে প্রচ মারধর ও উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলেন। সবার সামনে কলার ধরে মারতে মারতে মাঠের মধ্যে নিয়ে যান। আমরা এর বিচার চাই।’

প্রত্যক্ষদর্শী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘রমজান স্যার এর আগেও বহু ছাত্রকে মেরেছেন। অনেকে তার মার খেয়ে সুইসাইড করতে চেয়েছে। এর মধ্যে এক শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের কাছে ‘সুইসাইডাল নোট’ দিয়েছে। সেদিন জিহাদকে যেভাবে মেরেছে এটা অমানবিক। আমরা শিক্ষক নামের এই দুর্বৃত্তের শাস্তি চাই।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্র বলেন, আমার জীবনটা তিনি শেষ করে দিয়েছেন। তার কাছে কেউ প্রাইভেট না পড়লে তাকে অমানবিক নির্যাতন করেন।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, হেড স্যারের কাছে মোবারক হোসেন শান্ত নামে এক ছাত্র কয়েকদিন আগে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সুইসাইডাল নোট দিয়েছিল’। অভিযুক্ত রমজান মোল্লা বলেন, ‘ওই ছাত্র আমার সঙ্গে বেয়াদবি করেছে। তাই রেগে আমি তাকে মেরেছি। সে আমার ছেলেকেও মারতে চেয়েছে।’ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনে অভিযুক্ত শিক্ষককে শাসিয়েছি।’

জেলা শিক্ষা অফিসার হাবিবুল্লাহ বাহার জানান, ‘কোনো শিক্ষক এ কাজ করতে পারে না। বিষয়টি জানা নেই। তবে আমি সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ফোন করে বিষয়টি সমাধান করতে বলব।’ মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন বলেন, ‘কোনোভাবেই একজন শিক্ষক এরকম শাস্তি দিতে পারেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’

 

সর্বশেষ খবর