সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উৎপাদন ও বাজার মনিটরিংয়ে মনোযোগ

বাজেট ২০২৩-২৪

মানিক মুনতাসির

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশের অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা দেড় বছর ধরে চলে আসা ডলার সংকটের সমাধানের কোনো রাস্তা এখনো বের হয়নি। আমদানি খাতকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করলেও আমদানি ব্যয় খুব একটা কমেনি। রপ্তানি আয় এক মাসে বাড়ে তো অন্য মাসে কমে। প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে অবশ্য অনেকটা সন্তোষজনক পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

জ্বালানি খাতের ব্যয় বৃদ্ধির ফলে কৃষি ও শিল্প উৎপাদনের খরচ বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। তার চেয়েও বেশি বেড়েছে দ্রব্যমূল্য। বিশেষ করে খাদ্যপণ্য ও নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে রেকর্ড হারে। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মার্চ শেষে মূল্যস্ফীতির দুই অঙ্কের ঘর ছুঁইছুঁই করছে। আবার ঘনিয়ে এসেছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ অবস্থায় মানুষকে স্বস্তি দিতে মূল্যস্ফীতির এ চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে অধিক মনোযোগী থাকবে সরকার। এমন নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে- আসছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিল ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রাথমিকভাবে মূল্যস্ফীতির চাপ ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার ব্যবস্থাকে কঠোর তদারকির মধ্যে আনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অযাচিতভাবে কোনো পণ্যের দাম বাড়ালে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে মূল্যস্ফীতির চাপে ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট কমে ৫ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত সপ্তাহে ৪ এপ্রিল প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট ট্রেড রিফর্ম : অ্যান আর্জেন্ট এজেন্ডা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। অর্থবিভাগ বলছে, ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি থাকতে পারে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে বাজেট চূড়ান্ত করার সময়ে ঘাটতি একটু বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ ও প্রবৃদ্ধির হার কিঞ্চিৎ কম বা বেশি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ কিংবা ৭ দশমিক ৮ শতাংশ করা হতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন। সেই লক্ষ্যে বাজেট প্রণয়নের কাজ করছে এনবিআর ও অর্থবিভাগ। তবে বাজেটের অঙ্কগুলো চূড়ান্ত করা হবে আরও পরে। এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। উন্নয়ন বাজেট ধরা হতে পারে ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ, ভর্তুকি ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা, বাজেট ঘাটতি ধরা হতে পারে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এদিকে গত মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ থাকলেও নতুন অর্থবছরে তা ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে ও উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষি খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। যদিও আইএমএফ এর তীব্র বিরোধিতা করে আসছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এতে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘অন্য সব দেশের তুলনায় আমাদের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ভালো। বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। তবে এটা আমরা ঠিকই মোকাবিলা করতে পারব। আমরা উৎপাদন বাড়াব। বাজারে তদারকি বাড়াব। দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আসবে। এতে মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর