মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

কমছে না রাজস্ব আয়ের টার্গেট

আয়কর ও ভ্যাট বাড়িয়ে পূরণ হবে লক্ষ্য

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

আদায়ের হার কিছুটা কম হলেও চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের টার্গেট কমাচ্ছে না সরকার। এর পেছনে মূলত দুটি কারণ। প্রথমত : আইএমএফের শর্ত মেনে সামনের বাজেটে আরও বড় রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত : চলতি বাজেটে ভর্তুকি ও সুদ পরিশোধে যে হারে ব্যয় বেড়েছে, তাতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য কমানো হলে ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে। সরকারের বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সংশোধিত বাজেটের আকার কিছুটা কমানোর প্রস্তাব করা হলেও ভর্তুকি ও সুদ পরিশোধে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য কমানো যাচ্ছে না। কৃষি, বিদ্যুৎ ও খাদ্য খাতে ভর্তুকিতে ২১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়েছে। আবার সুদ পরিশোধে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। বাজেট শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে রাজস্ব আদায়ের হার বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের জিডিপির অনুপাতে কর আদায়ের হারও সারা বিশ্বের মধ্যে ন্যূনতম। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর (আইএমএফ’র ঋণের শর্ত) পক্ষ থেকে এটি বাড়ানোর চাপও রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমদানিজনিত ঘাটতির কারণে রাজস্ব আয় যে পরিমাণ কমেছে, তা আয়কর, ভ্যাটসহ প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়িয়ে লক্ষ্য পূরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-কে।

সূত্র জানায়, আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে এবং ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থও ছাড় করেছে। তবে এই কিস্তি পাওয়ার জন্য সরকারকে যেসব শর্ত মানার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানো। আইএমএফের হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব সংগ্রহের বিপরীতে কর-জিডিপি অনুপাত ছিল ৭.৮ শতাংশ। ঋণের শর্ত অনুযায়ী, আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এনবিআর-কে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে করের অবদান ৯ দশমিক ৫ শতাংশ করতে হবে। আর এ লক্ষ্য বিবেচনায় নিয়েই আগামী অর্থবছরে বড় রাজস্ব টার্গেট ধরা হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরের টার্গেট : সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি অর্থবছরের মূল লক্ষ্যের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল সভায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে। এর মধ্যে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার এনবিআর কর, ২০ হাজার কোটি টাকা নন এনবিআর কর এবং করবহির্ভূত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের হার : গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ‘কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল অন বাজেট ম্যানেজমেন্ট, কারেন্সি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রেট’ শীর্ষক সভায় রাজস্ব আয়ের টার্গেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই সভার উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে মোট ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের টার্গেটের মধ্যে এনবিআর ট্যাক্সের পরিমাণ ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা, নন এনবিআর ট্যাক্সের পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং করবহির্ভূত ট্যাক্সের পরিমাণ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম আট মাসের এনবিআর ট্যাক্সের প্রকৃত আদায় হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার ৫৩ শতাংশ, জুলাই-মার্চ প্রান্তিকে নন এনবিআর ট্যাক্সের প্রকৃত আদায় মূল লক্ষ্যের ২৭ শতাংশ এবং একই সময়ে করবহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের হার ছিল মূল্য লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৫৪ শতাংশ। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এনবিআর ট্যাক্সের পরিমাণ গত অর্থবছরের আদায়ের হারের চেয়ে সামান্য কম (৫৩ শতাংশ) হলেও বাকি দুই খাতে আদায়ের হার গত অর্থবছরের প্রায় অনুরূপ। এ কারণে এই তিনটি খাতেই রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য তা কমছে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল অন বাজেট ম্যানেজমেন্ট সভায় অংশ নিয়েছিলেন এমন এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের চ্যালেঞ্জ হিসেবে এনবিআর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে নিত্যপণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক হ্রাস, আমদানি কমে যাওয়াসহ বেশ কিছু কারণ তুলে ধরলেও অর্থ মন্ত্রণালয় প্রত্যক্ষ কর, ভ্যাট আদায় বাড়ানোসহ রাজস্ব খাতে সংস্কারের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করতে বলেছে।

সর্বশেষ খবর