রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

জনগণের আস্থার প্রতীক হবে জনতা ব্যাংক

মো. আবদুছ ছালাম আজাদ

শাহেদ আলী ইরশাদ

জনগণের আস্থার প্রতীক হবে জনতা ব্যাংক

আবদুছ ছালাম আজাদ

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আবদুছ ছালাম আজাদ বলেছেন, আমার স্বপ্ন চলতি বছরই জনতা ব্যাংক হবে জনগণের আস্থার প্রতীক। জনতা ব্যাংক যাতে দেশের শীর্ষ এবং উন্নত ব্যাংক হয়ে উঠতে পারে তার জন্য গত পাঁচ বছর আমি নিরলস চেষ্টা করেছি। ব্যাংকটিকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর রেখে যেতে পারছি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আব্দুছ ছালাম আজাদ এসব কথা বলেন। গতকাল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটিতে শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে শেষ কর্মদিবস কাটান তিনি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তিন বছরের জন্য জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ পান আব্দুছ ছালাম আজাদ। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর পুনরায় তাকে একই পদে নিয়োগ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আব্দুছ ছালাম আজাদের বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি এ পদে থাকতে পারবেন। গতকাল ৬৫ উত্তীর্ণ হলেন তিনি।

দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময় জনতা ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন ও ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে আলাপকালে আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনো ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেনি। আমার আমলে বিতরণকৃত ঋণের এক টাকাও খেলাপি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর যে আস্থা রেখেছেন, আমি চেষ্টা করেছি ব্যাংকটিকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার। শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। ফলে, সামনের দিনে ব্যাংকের পরিস্থিতি আরও ভালো হয়ে যাবে। চলতি বছরে অন্য ব্যাংকের আমানত কমলেও জনতা ব্যাংকের আমানত ২ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। অন্য ব্যাংকের মতো আমরা অবলোপন করে খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখাইনি। ইতোমধ্যে ব্যাংকটির পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো হবে।

তিনি বলেন, এক বছরের ব্যবধানে আমাদের মাধ্যমে আমদানি বেড়েছে প্রায় ১২৭ শতাংশ। ২০২২ সালে আমদানি হয়েছে ৪৮ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকার। যা ২০২১ সালে ছিল ২১ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। র‌্যাব, পুলিশ, আর্মি, ডিজিডিপি, বিপিসি, বিএডিসি, পেট্রোবাংলা, বিসিআইসিসহ সরকারি সংস্থাগুলোর ৮০ ভাগ ঋণপত্র (এলসি) খুলেছি আমরা। আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে কোর ব্যাংকিং সলিউশনের বাস্তবায়ন হয়েছে ৭০ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শতভাগ কোর ব্যাংকিং সলিউশন বাস্তবায়ন হবে। জনতা ব্যাংকের এমডি বলেন, ক্রিসেন্ট গ্রুপের কাছ থেকে এ বছর ১৭ কোটি টাকা নগদ আদায় করেছি। ইতোমধ্যে তারা রপ্তানি শুরু করেছে। চলতি সপ্তাহেই তাদের ৫ মিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসবে। সেখানে ১০ থেকে ২০ শতাংশ রেখে আমরা ঋণের সঙ্গে সমন্বয় করব। চলতি বছরের মধ্যে ক্রিসেন্ট পুরোটাই খেলাপিমুক্ত হবে। আমরা আনন টেক্সের সুদ মওকুফ করেছি। তারা সেল আউট হয়ে গেলে আমাদের সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার মন্দ সম্পদ কমে যাবে। আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, তিন বছরের ব্যবধানে জনতা ব্যাংকের সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে ব্যাংকটির সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার ৫৩৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৯২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। একই সময়ে আমানত বেড়েছে ৩২ হাজার ৩২৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বা প্রায় ৪৭ শতাংশ। ২০১৯ সাল শেষে আমানত ছিল ৬৯ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৪৬৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। একই সঙ্গে বেড়েছে ঋণ বিতরণও। একই সময়ে বেড়েছে ঋণ বিতরণও। ২০১৯ সাল শেষে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ৫৪ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা বা ৫৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ২০২২ সাল শেষে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ২০৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ঋণ বিতরণ বাড়লেও খেলাপি ঋণ কমেছে ১০ শতাংশের মতো। ২০১৯ সাল শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১৭ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় বেড়েছে ১২ দশমিক ৩৫ টাকা। ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ১ দশমিক শূন্য ৬ টাকা। ২০২২ সালে শেয়ার প্রতি আয় ১৩ দশমিক ৪১ টাকা।

আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, ব্যাংকের নিট মুনাফার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ হাজার ১৫৯ ভাগ। ২০১৯ সালে ব্যাংকের নিট মুনাফা ছিল ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ২০২২ সাল শেষে নিট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১০ কোটি ২২ লাখ টাকা। ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঝামেলামুক্তভাবে পেনশন প্রদানে ডিজিটাল পেনশন পেমেন্ট সিস্টেম (ই- পেনশন), গ্রাহকের ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের জন্য ই-জনতা মোবাইল অ্যাপ লঞ্চ করা হয়েছে চলতি বছরের মার্চে। রেমিট্যান্স সংগ্রহে সংযুক্ত আরব আমিরাতে জনতা ব্যাংকের চারটি শাখা খোলা হয়েছে। ই-কেওয়াইসি, ঋণ গ্রহীতাদের তথ্য ভান্ডার, এন্ট্রি মানি লন্ডারিং সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। জনতা ব্যাংকের সদ্য সাবেক এমডি বলেন, ২০২২ সাল শেষে অতিরিক্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। আগের বছর ২০২১ সালেও প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১০ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। লোকসানি শাখা ৫০টি থেকে কমিয়ে ৩৩টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। আব্দুছ ছালাম আজাদ ১৯৮৩ সালে সিনিয়র অফিসার হিসেবে জনতা ব্যাংকে যোগ দেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি শাখায় দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে ৩৬ বছরের মধ্যে ২৬ বছরই বিভিন্ন ব্যাংক শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে যোগ দেন। তিন মাস পর একই পদে যোগ দেন জনতা ব্যাংকে। ১৯৭১ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এ ব্যাংকার।

 

সর্বশেষ খবর