বাসায় আরবি পড়াতে গিয়ে সুসম্পর্ক। একপর্যায়ে সবার অগোচরে ছাত্রীকে মৌখিকভাবে বিয়ে করেন গৃহশিক্ষক। পরিবারের কেউ তা মেনে না নেওয়া এবং পারিবারিকভাবে বিয়ে করতে ছাত্রীকে রাজি করাতে না পারায় ক্ষিপ্ত হন তিনি।
র্যাব জানায়, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাইয়ের ছুরি বানিয়ে নেন ওই গৃহশিক্ষক। এরপর সেই ছুরি নিয়ে বাসায় ঢুকে কুপিয়ে কলেজছাত্রী রাবেয়া আক্তারকে (২১) খুন করেন। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে ওই ছাত্রীর মা ও দুই বোনকেও কুপিয়ে জখম করেন তিনি। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গত ৮ মে গাজীপুরের সালনায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে ওই কলেজছাত্রীকে হত্যা করা হয়। বুধবার রাতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১-এর অভিযানে খুনের ঘটনায় একমাত্র আসামি সাইদুল ইসলামকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ২০২০ সালে করোনাকালে রাবেয়া তার দুই বোন ও মাকে আরবি পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক হিসেবে সাইদুলকে নিয়োগ করা হয়। এ সুবাদে তিনি প্রতিনিয়ত সে বাসায় যাওয়া-আসা করতেন। একপর্যায়ে ওই পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিভিন্ন সময় রাবেয়ার প্রতি কুনজর এবং একপর্যায়ে রাবেয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেন সাইদুল। ৫-৬ মাস আরবি শেখানোর পর তার কাছে আরবি পড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাইদুল প্রতারণামূলকভাবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে রাবেয়াকে মৌখিকভাবে বিয়ে করেন। বিয়ে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রাবেয়া ও তার পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু রাবেয়ার পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে সাইদুলের সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত বছরের অক্টোবরে রাবেয়া গাজীপুর সদর থানায় তাকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে একটি অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাইদুল কিছুদিন রাবেয়াকে উত্ত্যক্ত করা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু দুই মাস ধরে কলেজ এবং বাসার বাইরে যাওয়া-আসার পথে পুনরায় তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে রাবেয়াকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। একপর্যায়ে সাইদুল জানতে পারেন রাবেয়া উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিষয়টি সাইদুল মেনে নিতে না পেরে রাবেয়া ও তার পরিবারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৭ মে বিকালে স্থানীয় বাজারে কামারের দোকানে ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাই করার একটি ছুরি তৈরি করে নেন। পরদিন ৮ মে সন্ধ্যায় ছুরি সংগ্রহ করে রাবেয়ার বাসায় গিয়ে সরাসরি তার রুমে ঢুকে যান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছুরি দিয়ে মাথায়, গলায়, হাতে এবং পায়ে আঘাত করেন। এ সময় রাবেয়ার চিৎকারে তার মা ও দুই বোন এগিয়ে এলে তাদেরও ছুরি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যান। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এসে আহতদের হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাবেয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাবেয়া ২০২০ সালে জয়দেবপুরের একটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর গাজীপুরের চৌরাস্তার একটি কলেজে স্মাতক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি আইইএলটিএস পড়ালেখার পাশাপাশি স্থানীয় একটি বিউটি প্রোডাক্টস অনলাইন শপে চাকরি করতেন। আর গ্রেফতার হওয়া সাইদুল চট্টগ্রামের একটি মাদরাসা থেকে দাওরা পাস করে গাজীপুরের একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করার পাশাপাশি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। এর পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন বাসায় গিয়ে আরবি পড়াতেন।