শনিবার, ১৩ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
জমজমাট সিটি ভোট

মাঠে জামায়াত-বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা

রাজশাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

মাঠে জামায়াত-বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী দিচ্ছে না বিএনপি। কাউন্সিলর পদেও কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, নেতা-কর্মীদের এমন নির্দেশনা দিয়েছিল বিএনপির হাইকমান্ড। তবে দলের হাইকমান্ডের সেই নির্দেশনা অমান্য করে রাজশাহী সিটিতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোটের মাঠে নেমেছেন জামায়াত, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। বিএনপি নেতারা অনেকে ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ব্যাপক শোডাউন দিয়ে এলাকায় চালাচ্ছেন প্রচারণা। জামায়াত অনেকটা ঘোষণা দিয়েই রাজশাহী সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী দিচ্ছে। নগরীর ২, ২৬, ২৮, ২৯ ও ৩০ নম্বরসহ অন্তত সাতটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মহানগর জামায়াতের শুরা সদস্য মাজেদ আলী। জানা গেছে, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের যেসব নেতা কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর হিসেবে আছেন তারা প্রত্যেকেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বেশির ভাগই ইতোমধ্যে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। বাকিরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোনো কোনো ওয়ার্ডে বিএনপির একাধিক নেতা লড়াইয়ে নামছেন। সূত্র মতে, নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপি নেতা মাহবুব সাঈদ টুকু। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রস্তুতি নিচ্ছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাজউদ্দিন আহমেদ সেন্টু। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটে অংশ নিচ্ছেন বদিউজ্জামান বদি। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর সোহরাব হোসেন এবং যুবদল নেতা আতাউর রহমান নির্বাচনে নামার প্রস্তুতি নিয়েছেন। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি আজিজুর রহমানের ছেলে রেজাউল করিম নান্নুও এখানে নির্বাচন করবেন বলে গুঞ্জন আছে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনে আসছেন বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর দিলদার হোসেন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আবদুস সোবহান লিটন বিএনপির সমর্থক। তিনি এবারও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২০০২ সাল থেকে টানা চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন শাহ মখদুম থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি বেলাল আহমেদ। এবারও তিনি নির্বাচনে লড়তে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পচা। তিনি যুবদলের সাবেক নেতা। তিনিও ভোটে অংশ নিচ্ছেন। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টিটো। তিনি রাজশাহী মহানগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন মহানগর বিএনপির সহসভাপতি তরিকুল আলম পল্টু। এবারও তিনি ভোটে অংশ নিচ্ছেন। তবে মাঠে প্রচার আছে পল্টু আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। ২০০২ সাল থেকে টানা চারবার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ারুল আমিন আজব। তিনি মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। তিনিও মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আশরাফুল হোসেন বাচ্চুও মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামসুন নাহার ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুসলিমা খাতুন বেলী। তারা দুজনই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশরাফুল আলম বাচ্চু বলেন, ‘আমি সক্রিয়ভাবে ছাত্রদল করেছি। এখন বিএনপির পদে নেই। সবাই আমাকে বিএনপির লোক হিসেবেই চেনে। বিএনপি নির্বাচনে আসছে না, সেটা ঠিক আছে। আমি মানুষের সঙ্গে থাকি। সে জন্যই নির্বাচনে আসছি।’ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও মহিলা দলের নেত্রী সামসুন নাহার দাবি করেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া কিংবা না নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির কেউ তাদের সঙ্গে কথা বলেননি। তাই নির্বাচনে আসছেন। তিনি বলেন, ‘আমার চেয়ে সিনিয়র নেতারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তারা মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। তাই আমিও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুন অর রশিদ বলেন, বিএনপি নেতাদের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা অজুহাত দিচ্ছেন এটি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না। তাই তাদের নির্বাচন করতে বাধা নেই। তিনি বলেন, ‘বিএনপির অনেক জায়গায় কমিটি নেই। তাই যারা নির্বাচনে আসছেন, তাদের অনেকেরই পদ-পদবি নেই। কিন্তু তারা বিএনপি করেন। যারা নির্বাচনে অংশ নেবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বিএনপি নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা বলেন, ‘যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তারা মনে মনে আওয়ামী লীগ। তারা বিএনপির লোক হতে পারে না। আমরা তাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’ উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টিতে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ওই নির্বাচনে মেয়র হন বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের ২১টিতেই বিজয়ী হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলররা। সে নির্বাচনে মেয়র হন আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।

সর্বশেষ খবর