রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

মেজর পরিচয়ে প্রতারণা

চাকরি দেওয়ার নামে হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সশস্ত্র বাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও অসংখ্য প্রতারণার মূল হোতা আবদুর রাজ্জাক ওরফে সাগর চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। র‌্যাব-১০-এর একটি দল গতকাল ভোরে টাঙ্গাইলর কালিহাতী থানার দক্ষিণ বেতডোবা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। র‌্যাব বলছে, গ্রেফতার ব্যক্তি সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ও চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমন কিছু অভিযোগের সত্যতা পেয়েই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে এক সেট সেনাবাহিনীর কম্ব্যাট ইউনিফর্ম, কাঁধব্যাগ, সাগর নামীয় নেমপ্লেট, ফেস মাস্ক, ফিল্ড ক্যাপ, একটি মোটরসাইকেলের লাইসেন্স, সেনাবাহিনীতে নিয়োগের পাঁচটি ভুয়া নিয়োগপত্র ও মেডিকেল সনদপত্র, পাঁচটি ভুয়া এনআইডি কার্ড, একটি পোস্ট অফিস সেভিংস বই, সোনালী ব্যাংকে টাকা প্রেরণের একটি রিসিপ্ট কপি, চারটি মোবাইল ফোন ও ১১টি বিভিন্ন কোম্পানির সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়। গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংস্থাটির মিডিয়া সেন্টারে বিষয়টি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন র‌্যাব-১০ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ উদ্দীন। তিনি বলেন, গ্রেফতার প্রতারক কখনো মেজর মো. আবদুর রাজ্জাক, কখনো মেজর সাগর চৌধুরী, কখনো জাহিদ চৌধুরী, কখনোবা সমীর (৩১) নাম ধারণ করতেন। তার বাবার প্রকৃত নাম মো. খাইরুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের গোবিন্দপুরে। তবে তিনি টাঙ্গাইলের কালিহাতীর খাইরুন মুন্সির পাড়ায় থাকেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র‌্যাব-১০ অধিনায়ক বলেন, ২৪ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ভিকটিম মোছা. সোনিয়ার (৩৯) সঙ্গে প্রতারক সাগরের পরিচয় হয়। সোনিয়ার সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় সাগর নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দেন এবং বর্তমানে তিনি মাঝিরা সেনানিবাস, বগুড়ায় কর্মরত আছেন বলে জানান। এ ছাড়া তিনি সোনিয়ার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও ইমো) কথা বলার সময় বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত অবস্থায় কথা বলতেন। ফলে ভিকটিম সোনিয়া প্রতারক সাগরকে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা (মেজর) বলে বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, আলাপচারিতার একপর্যায়ে সোনিয়াকে সাগর মাঝিরা সেনানিবাস, বগুড়া সিএমএইচে নার্সের চাকরি দেওয়ার বিষয়ে প্রলোভন দেখান। সাগরকে ভিকটিম সোনিয়া সরল মনে বিশ্বাস করেন এবং চাকরির প্রয়োজন থাকায় সাগরের প্রস্তাবে রাজি হন। অতঃপর তিনি আরও চার-পাঁচজনকে চাকরি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে সোনিয়াকে জানান। সাগরের কথামতো সোনিয়া তার পরিচিত শাপলা খাতুন (২৫), মুরশালিনা খাতুন (২৬), মোছা. মিতা খাতুন (২৭) ও জ্যোৎস্না বেগমকে (২৭) চাকরির জন্য রাজি করান। পরে তারা সবাই সাগরের সঙ্গে মেসেঞ্জার ও ইমোতে ভিডিও কলে কথা বলেন। এরপর সাগর তাদের প্রত্যেককে নার্সের চাকরি দেবেন বলে জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। সাগরের কথামতো তারা সবাই চলতি বছর ১৫ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সাগরের দেওয়া নগদ ও বিকাশের বিভিন্ন নম্বরে ১৭ লক্ষাধিক টাকা পাঠান। টাকা দেওয়ার কিছুদিন পর ভিকটিমরা তাদের চাকরির বিষয়ে জানার জন্য প্রতারক সাগরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। তখন তারা দেখতে পান, সাগর তার ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাকটিভ এবং সব মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দিয়েছেন। পরে ভিকটিমরা অনেক চেষ্টা করেও সাগরের আর কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে না পেরে কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন এবং অধিনায়ক র‌্যাব-১০ বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেন।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর