শীতকালের ফুলকপি গ্রীষ্মকালে চাষ করে বাজিমাত করেছেন সৈয়দপুরের কৃষক মো. মাহাতাব। উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের কাঠারিপাড়ার ফকিরের বাঁশেরতল এলাকায় চাষ করা হয়েছে এ ফুলকপি। প্রথমবারেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন এই কৃষক। মাত্র ৩০ শতক জমিতে তিনি ফুলকপির চাষ করেন। ইতোমধ্যে জমির অর্ধেক ফুলকপি বিক্রি করেছেন। বেশ চড়া দামে ফুলকপি তিনি বিক্রি করেছেন। জমি থেকে পাইকাররা ৮০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ফুলকপি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শৌখিন ভোক্তারা কিনছেনও বেশ মজা করে।
কৃষক মাহাতাব জানান, ৩০ শতক জমিতে লাগানো ফুলকপির মধ্যে অর্ধেক বিক্রি হয়েছে ৭০ হাজার টাকায়। অবশিষ্ট যা আছে তাও কয়েক দিনের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে। সব মিলে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। ফুলকপির চারা থেকে গাছে ফুল আসা পর্যন্ত কৃষক মাহাতাবের খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। খরচ বাদে শুধু ফুলকপি বিক্রি করে তিনি আয় করবেন লাখ টাকা। ফুলকপির খেতে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা হয়েছে দেশি মরিচ। পুরোপুরি জমি থেকে ফুলকপি তোলা শেষ হলে মরিচ গাছের সামান্য বাড়তি যত্ন নেবেন। আবহাওয়া আর বর্তমান বাজারদর বজায় থাকলে ১ লাখ টাকার ওপরে তিনি মরিচও বিক্রি করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ফুলকপির জমিতে সাথী ফসল মরিচ চাষ করায় মরিচ গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচ লাগেনি। ওই এলাকায় তিনি ৯০ শতক জমি অন্যের কাছ থেকে তিন বছর আগে ২ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় বন্ধক নিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন। মরিচ, ফুলকপি বাদে অন্য জমিতে টমেটোর চাষও করেছেন। বর্তমানে টমেটোর সিজনও প্রায় শেষ। এ বছর লাখ টাকার ওপরে টমেটোও তিনি বিক্রি করেছেন। তার মতে, শীতকালের সবজি ফুলকপি গ্রীষ্মকালে চাষের তার পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। এ বছরই প্রথম চাষ করেছেন। পরিমিত পরিচর্যাও করতে পারেননি। এবারের ফসল চাষ তার টেস্ট কেস। তবে সাথী ফসল মরিচের সিজন শেষ হলে একই জমিতে তিনি আগাম জাতের ধান চাষ করবেন। তার মতে, জমিতে প্রয়োজনীয় জৈব ও অজৈব সার ব্যবহার করলে জমি থেকে তিনটি ফসল বছরে উৎপাদন করা সম্ভব। একই সঙ্গে জমিতে ফসল ফলিয়ে অধিক অর্থ আয়ও করা যায়। কৃষক মাহাতাবের জমিতে গ্রীষ্মকালীন একেকটি ফুলকপি ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজন হয়েছে। আগামী বছর যাতে প্রতিটি ফুলকপি শীতকালের মতো ফলানো যায় সেই বিষয়ে তিনি আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। কৃষক মাহাতাবের ফুলকপি চাষ দেখে একই ইউনিয়নের বড়দহ গ্রামের বাসিন্দা গনিও ৭৫ শতক জমিতে ফুলকপির চাষ করেছেন। এমন ফসল উৎপাদনকারী কৃষকের সংখ্যা আগামী দিনে বাড়বে বলে স্থানীয়রা জানান।
কথা হয় ফুলকপি চাষি মাহাতাবের সঙ্গে। তিনি বলেন, টেস্ট কেস হিসেবে এক বীজ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ফুলকপির বীজ কিনে বপন করে চারা তৈরি করেন। চারা বেড়ে ওঠার একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর জমি প্রস্তুত করে ওই চারা রোপণ করা হয়। প্রথমে ৫০ শতক জমিতে ফুলকপির চারা রোপণ করেছিলেন। কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই টেস্ট কেস হিসেবে গ্রীষ্মকালে ফুলকপির চাষ করতে গিয়ে সঠিক পরিচর্যার অভাবে ২০ শতক জমির ফুলকপির চারা গাছ মরে যায়। তারপর তিনি অবশিষ্ট ৩০ শতক জমিতে রোপণকৃত চারাগাছ লালন করতে দীর্ঘদিনের কৃষিকাজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগান। সুফলও মেলে। প্রথমবারেই গ্রীষ্মকালে ফুলকপি চাষ করে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। কৃষি দফতরের কোনো প্রকার সহযোগিতা, পরামর্শ ছাড়াই তিনি অসময়ে ফুলকপির চাষ করে আশাতীত মুনাফা করেছেন। গোটা উপজেলায় কৃষক মাহাতাব এখন মডেল কৃষকের তকমা বেসরকারিভাবে পেতে যাচ্ছেন। শীতকালীন ফুলকপি গ্রীষ্মকালে চাষ করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন কৃষক মাহাতাব, এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে মুঠোফোনে কথা হয় উপজেলা কৃষি দফতরের কৃষি কর্মকর্তা মমতা সাহার সঙ্গে। তিনি জানান, এটি কৃষি বিভাগ ও দেশের জন্য অত্যন্ত সুখবর। আগামী দিনে এই মৌসুমে যাতে আরও অধিক পরিমাণে চাষ করা যায় সেই বিষয়টি নিয়ে আমরাও ভাবছি।