শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

গ্যাস সংকট কাটছে কমবে লোডশেডিংও

সিএনজি স্টেশনগুলোতে দুর্ভোগ, কাল থেকে পরিস্থিতি উন্নতির আশা

জিন্নাতুন নূর

ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে তীব্র গ্যাস সংকট তৈরি হয়েছিল তা আজ (মঙ্গলবার) থেকে কাটতে শুরু করবে বলে আশা করছে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে গতকাল রাত থেকে চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকট কমতে শুরু করেছে। চট্টগ্রামে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ শুরু হলে ঢাকাতেও গ্যাস সরবরাহ শুরুর কথা। তখন রাজধানীর গ্যাস সংকট পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে আসবে। মোখার কারণে গ্যাস সংকটে গতকালও দেশে প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ ঘাটতি হয়। সাগরে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনালের একটির উৎপাদন শুরু হওয়ায় অতিরিক্ত এই লোডশেডিংও আগামী দুই-এক দিনের মধ্যেই কমে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে সব মিলিয়ে পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও বেশ কয়েকদিন লাগবে।

ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত শুরু হওয়ার আগে মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পর ঢাকাসহ পুরো চট্টগ্রামে শুরু হয় তীব্র গ্যাস সংকট। জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতের আগে সতর্কতার অংশ হিসেবে শুক্রবার রাতে মহেশখালীর ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর গত কয়েকদিন ধরে এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ঢাকা ও চট্টগ্রামে শনিবার সকাল থেকে শুরু হয় গ্যাসের জন্য হাহাকার। বন্ধ হয়ে যায় বাসা বাড়ির রান্নাবান্না। এ ছাড়াও বন্ধ হয়ে গেছে গ্যাস নির্ভর সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতে করে ধস নামে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও। ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং শুরু হয়। গ্যাস সংকটের কারণে বন্ধ হয় চট্টগ্রামের সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো। ঢাকার সিএনজি স্টেশনগুলো বন্ধ না হলেও সেখানে গ্যাসের চাপ খুব কম থাকায় চালকরা কাক্সিক্ষত গ্যাস নিতে পারেনি। গতকালও ঢাকার বিভিন্ন সিএনজি স্টেশনের বাইরে গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। চট্টগ্রামে সিএনজি স্টেশন বন্ধ থাকায় সিএনজিচালিত বেশির ভাগ টেক্সি, টেম্পু ও বাসসহ অন্যান্য গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল)-এর মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস) প্রকৌশলী রইস উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে গ্যাস সংকটের সমাধান হচ্ছে। গতকাল দুপুর থেকে আবাসিক পর্যায়ে আংশিক গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। আশা করছি গ্যাস পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে। পর্যায়ক্রমে শিল্পকারখানা ও অন্যান্য খাতে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে।’ জানা যায়, মহেশখালীতে যে দুটি এলএনজি টার্মিনাল ছিল মোখার কারণে সেগুলোর সরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কারিগরি কারণে এবং সমুদ্র খুব বেশি উত্তাল না থাকায় একটি টার্মিনাল সরতে পারেনি। ফলে সেটি থেকেই এখন উৎপাদন শুরু হয়েছে। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন গতকাল জানান, লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হতে আরও দুই দিন লাগবে। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়নি। কক্সবাজারে যে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে সেগুলোর উৎপাদন বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যায়নি। এ জন্য উৎপাদন ঘাটতি ছিল। এ জন্য লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেশি ছিল। তিনি আরও জানান, একটি টার্মিনালের উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং গ্যাসের সরবরাহ আংশিক পাওয়া যাবে। এর কারণে লোডশেডিং পরিস্থিতিরও কিছুটা উন্নতি হবে। আরেকটি টার্মিনালের উৎপাদন শুরু হতে ১০/১২ দিন লাগলেও এই সময়ের মধ্যে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন শুরু হবে। গ্যাসের ঘাটতি রামপালের উৎপাদন দিয়ে কাভার হয়ে যাবে। তবে আশা করছি, বুধবার পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো হবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শামীম হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গতকালও ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২৪টি বিদু্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ছিল। দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুতের মোট চাহিদা ছিল ১২ হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরীতে উৎপাদন হয় ৯ হাজার ৯৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ সময় বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ১৬ মেগাওয়াট। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের অপারেশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সেলিম মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যদি চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় তাহলে ঢাকাতেও গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। সেক্ষেত্রে ঢাকায় অতিরিক্ত যে গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে তা কিছুটা কমে আসবে।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘গ্যাস সংকটের কারণে শনিবার থেকে চট্টগ্রামের সিংহভাগ শিল্পকারখানা বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন মঙ্গলবারের (আজ) মধ্যে শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে।’

তবে কেজিডিসিএলের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে মহেশখালী ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনালের একটির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে একটি টার্মিনাল দিয়ে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত টার্মিনাল দিয়ে গ্যাস সরবরাহ শুরু হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।

এদিকে গত ১৪ মে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, দুই দিনের মধ্যেই গ্যাস সরবরাহের উন্নতি হবে। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে ১০ থেকে ১২ দিন। একই সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী লোডশেডিং পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দুটি এলএনজি টার্মিনালের একটি দুই দিনের মধ্যে চালু হবে। অন্যটি চালু হতে সময় লাগবে। (প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেন চট্টগ্রামের সিনিয়র প্রতিবেদক মুহাম্মদ সেলিম)।

সর্বশেষ খবর