শনিবার, ২০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

অসময়ে আগ্রাসি পদ্মা বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

অসময়ে আগ্রাসি পদ্মা বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে অসময়ে আগ্রাসি হয়ে উঠেছে পদ্মা নদী। বর্ষার আগেই ভাঙনে বিলীন হচ্ছে উপজেলার বড় নওপাড়া, সুন্দিসার, বেজগাঁও ও গাঁওদিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। এসব এলাকায় পদ্মাতীরে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। বুধবার রাতে উপজেলার বেজগাঁও গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন, ওসমান গণি ও বাদশা মিয়ার বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া কালবৈশাখী ঝড়ে পদ্মায় তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে মাটি সরে গেছে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে ব্রাহ্মণগাঁও উচ্চবিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায়। এতে অনেকের বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙনে বাড়ি হারানো বেজগাঁও গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমাগো সব শেষ হইয়া গেল। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ব্যবস্থা নিল না।’ তিনি অভিযোগ করেন, হাজার হাজার বাল্কহেড দিয়ে নদী থেকে বালু লুট করে নেওয়া হচ্ছে। এতে নদী ভাঙন বাড়ছে। অসময়ে তীব্র ভাঙনে দিশাহারা পদ্মী তীরের হাজারও পরিবার। সাজানো-গোছানো ঠিকানা নিশ্চিহ্ন হওয়ার আতঙ্কে ওই সব মানুষের চোখে ঘুম নেই। তারা ভাঙনের আশঙ্কায় বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি অনেকেই গাছপালা কেটে নিচ্ছেন। কেউ কেউ রশি-বাঁশ দিয়ে ভাঙনরোধের চেষ্টা করছেন। ভুক্তভোগী গৃহবধূ তমালী বেগম বলেন, তিন দিন আগেও নদী দূরে ছিল। দুই দিনের ঝড়ে ঢেউয়ের আঘাতে আমার ঘরের নিচের মাটি সরে গেছে। দুই বছর আগে এনজিও থেকে কিস্তি নিয়ে এ ঘর তুলেছি। গত সপ্তাহে ঋণের কিস্তি শোধ করেছি। এখন ভাঙনের মুখে থাকা এ ঘর অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে অন্তত ৫ হাজার টাকা লাগবে। আমার স্বামী ঢাকার একটি দোকানের কর্মচারী। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি, ঘর সরাব কীভাবে? স্থানীয়রা জানান, ১৯৯২ সাল থেকে পদ্মা নদীর অব্যাহত ভাঙনে লৌহজং উপজেলা সদরসহ ৪০ গ্রাম এবং টঙ্গীবাড়ি উপজেলার ১০ গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। গত বছর থেকে জেলার লৌহজং উপজেলার খড়িয়া থেকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘিরপাড় পর্যন্ত ৯ দশমিক ১ কিলোমিটার এলাকায় পদ্মা তীর রক্ষাবাঁধ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ভাঙন এলাকার মধ্যে গাওদিয়া, বড়নওপাড়া, সুন্দিসার, বাঘেরবাড়ি প্রকল্পের আওতায় থাকলেও রাউৎগাঁও প্রকল্পের বাইরে রয়েছে। এ রাউৎগাঁওয়েও এখন নদীভাঙন প্রবল আকার ধারণ করেছে। লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল গতকাল ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, লৌহজং উপজেলার বেজগাঁওয়ে ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া বড় নওপাড়া, সুন্দিসার ও গাওদিয়ায় ভাঙন চলছে। আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় শনিবার থেকে বালুর বস্তা ফেলা হবে। মুন্সীগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, ভাঙন ঠেকাতে ৪৪৬ কোটি টাকার রক্ষাবাঁধ প্রকল্প চলমান রয়েছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া রক্ষাবাঁধ নির্মাণ শেষ হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে। তবে নতুন এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় আরও ৩২ কোটি টাকার প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি জানান, লৌহজংয়ের খড়িয়া থেকে টঙ্গীবাড়ির দিঘিরপাড় পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার এলাকায় প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও এর বাইরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাই আরও সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনরোধে প্রকল্প প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে।

 

সর্বশেষ খবর