শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
খুলনা সিটি নির্বাচন

নৌকা ঠেকাতে কৌশলে দুই প্রার্থী

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর আজ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামছেন মেয়র প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ভোট কেন্দ্রে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

অন্যদিকে ভোটার উপস্থিতি মাথায় রেখেই কৌশলে তাঁকে পরাজিত করার ছক কষছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু ও ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আবদুল আউয়াল। ঘরোয়া বৈঠকে এরই মধ্যে নেতা-কর্মীদের এসব বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশনা দিয়েছেন প্রার্থীরা।

তফসিল অনুযায়ী খুলনা সিটি নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ আজ, এরপর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার, ভোট গ্রহণ ১২ জুন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক গতকাল দুপুরে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের জেলা শাখার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি বলেন, ‘খুলনা সিটিতে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন সাতজন। এর মধ্যে তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক ভোটারদের ঠিকানা যাচাই করে সঠিক না পাওয়ায় তাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়। এখন যারা নির্বাচনে আছেন তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ভোট কেন্দ্রের ১ হাজার ৭০০ বুথে একজন করে এজেন্টও দিতে পারবেন না। আমাদের ১ হাজার ৭০০ বুথেই এজেন্ট থাকবে। ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট না থাকলে অভিযোগ উঠতে পারে- তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি আগেভাগে জানিয়েছি।’

ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ভোট যাকেই দিন না কেন আপনি ও আপনার পরিবারের সদস্যরা সকালেই কেন্দ্রে যাবেন। আপনাদের দেখাদেখি অন্যরা কেন্দ্রে যেতে সাহস পাবে। আমরা চাই কেন্দ্রে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি; যাতে প্রধানমন্ত্রী বহির্বিশ্বকে বলতে পারেন- আমার দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোট দেন।’ অন্যদিকে ভোটার উপস্থিতি মাথায় রেখেই কৌশল সাজাচ্ছেন জাপা প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু। তিনি বলেন, ‘৩৮ বছর ধরে রাজনীতি করি। আমার নামে বাড়ি দখল, জমি দখল বা চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ নেই। খুলনা সিটিতে নাগরিক ভোগান্তি থেকে বাঁচতে ভোটাররা একজন ভালো মানুষকেই ভোট দেবেন।’ তিনি বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোট দিতে সাধারণ মানুষ কেন্দ্রে যেতে পারে না। তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তবে এবার যদি মানুষ ভোট দিতে পারে তাহলে নীরব বিপ্লব ঘটে যাবে। বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী নেই, তাদের সমর্থক ভোটসহ আওয়ামী লীগের একটা অংশের ভোটও আমি পাব।’ গতকাল নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কর্মিসভায় ভোটারদের উদ্দেশে মধু বলেন, ‘আমাকে একবার নির্বাচিত করুন, সুন্দর পরিকল্পিত নগরী বুঝে নেবেন।’ তিনি বলেন, ‘খুলনা সিটিতে আওয়ামী লীগের ভোট আছে ৩২ পার্সেন্ট। এখন জরিপ করলে ১৫ পার্সেন্টের বেশি হবে না। তারা অনেক উন্নয়ন করেছে কিন্তু ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ায় মানুষ তাদের অপছন্দ করছে।’ একইভাবে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী আবদুল আউয়াল বলেন, ‘খুলনা সিটিতে হাজারো বেকার যুবক প্রতিনিয়ত নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। পাড়ায় মহল্লায় অবৈধ ব্যবসাসহ কিশোর গ্যাং তৈরি করে অপরাধমূলক কর্মকা- করে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ বেকারত্ব।’ তিনি বলেন, বিগত দিনে যারা মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন তারা যুবকদের মনের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। গতকাল দৌলতপুরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভোটারদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি বলেন, ‘আমি বিজয়ী হলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা কার্যকর করব। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার যুবশক্তির কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও কৃষি খামার গড়ে তোলার লক্ষ্যে উৎসাহ প্রদান ও নগর অর্থ বিভাগ থেকে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।’ শিক্ষিত বেকার যুবকদের ফ্রি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ এবং ফ্রিল্যান্সিং বা ই-ল্যান্সিং ট্রেনিং দিয়ে আয়ের পথ সৃষ্টি করা হবে।

সর্বশেষ খবর