শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

নানা আয়োজনে কবি নজরুলের জন্মদিন

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

নানা আয়োজনে কবি নজরুলের জন্মদিন

দ্রোহ, প্রেম, চেতনার কবি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও গানে দ্রোহ, প্রেম, মানবতা এবং সম্প্রীতির জয়গান গেয়েছেন কবি। আর তাইতো কবির ১২৫তম জন্মদিনে শ্রদ্ধা, কথামালা, কবিতা, গান ও নৃত্যের নান্দনিকতায় কবির জয়গান গেয়েছেন ভক্ত-অনুরাগীরা। নজরুলজয়ন্তীর এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘অগ্নিবীণার শতবর্ষ : বঙ্গবন্ধুর চেতনায় শানিত রূপ’। গতকাল ১১ জ্যৈষ্ঠ ছিল কবির ১২৫তম জন্মদিন। সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা, আলোচনা, কবিতা, নাচ, গান ও নাটকের মধ্য দিয়ে কবির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও অনুরাগের কথা তুলে ধরেছেন ভক্ত-অনুরাগীরা।

ফুলে ফুলে ঢাকা সমাধি : ফুলে ফুলে সকালে কবির সমাধি ঢেকে দেয় ভক্ত-অনুরাগীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, নজরুলের জীবনের উৎকৃষ্ট সময়ে লেখা ১২টি অনবদ্য কবিতা নিয়েই ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। সেটি তাঁকে অমর করে রেখেছে। তিনি বলেন, ‘কবি নজরুল তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থটি যাকে উৎসর্গ করেছেন, সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই বারীন্দ্রকুমার ঘোষ ছিলেন তৎকালীন সমগ্র ভারত ও বাংলার মহানায়ক। সমসাময়িক সময়ে যদি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থাকতেন এবং তাঁর বয়স যদি ওই রকম হতো, যেটি তাঁর হয়েছিল চল্লিশের দশকে; চল্লিশের দশক থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু যে অসাধারণ অবদান রেখেছেন, তাহলে নিঃসন্দেহে কবি নজরুল এ কাব্যগ্রন্থটি বঙ্গবন্ধুর নামেই হয়তো উৎসর্গ করতেন।’ এর আগে সকালে ক্যাম্পাসের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে উপাচার্যের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা নিয়ে জাতীয় কবির সমাধিতে যান শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতিহা পাঠ করেন তাঁরা। এরপর উপাচার্যের সভাপতিত্বে সমাধিপ্রাঙ্গণে আলোচনা সভা হয়। শ্রদ্ধা জানিয়ে কবির নাতনি খিলখিল কাজী কবির জন্মদিনে সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি জানান। জাতিসংঘের কাছে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি হেরিটেজ ঘোষণার দাবিও জানান তিনি।

এদিকে জাতীয় কবির জন্মজয়ন্তীতে সকালে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল গবেষণা কেন্দ্র, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রীয় সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

ছায়ানট : জাতীয় কবির জন্মজয়ন্তীতে দুই দিনের নজরুল উৎসবের আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনের এ আয়োজনের শুরুতেই ছায়ানটের বড়দের দল পরিবেশন করে দলীয় নৃত্যগীত ‘হে পার্থসারথি! বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ’। এরপর কথনপর্বে অংশ নেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী। নুসরাত জাহান রুনা পরিবেশন করেন ‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায়’, মৌসুমী সাহা গেয়ে শোনান ‘তোমার বুকের ফুলদানিতে’, স্বর্ণা নাগ গেয়ে শোনান ‘মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই’। মোমের পুতুল মমির দেশের মেয়ে গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে ছায়ানটের ছোটদের দল। দলীয় সংগীত পরিবেশন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ ও ছায়ানটের ছোটদের দল।

শিল্পকলা একাডেমি : আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবির জন্মদিন উদযাপন করেছে শিল্পকলা একাডেমি।

সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনের এ আয়োজনে আলোচক ছিলেন প্রাবন্ধিক পীযূষকান্তি বড়–য়া। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয় শিল্পকলা একাডেমির শিশু সংগীত দল ও বড়দের দল। একক সংগীত পর্বে বিজন মিস্ত্রী পরিবেশন করেন ‘আমার আপনার চেয়ে’, মিরাজুল জান্নাত সোনিয়া পরিবেশন করেন ‘তোমার কুসুম বন’ ও ‘আমি আসিয়াছি ভুলে’। দলীয়ভাবে ‘জয় হোক, জয় হোক’ পরিবেশন করেন সরকারি সংগীত কলেজের শিল্পীরা এবং ‘নাচের নেশায় ঘোর লেগেছে’ ও ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পীরা। টিটু মুনসী আবৃত্তি করেন কবির ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি।

সর্বশেষ খবর