মেহেরপুরের গাংনী থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে আমতৈল গ্রাম। এখানে ২ শতাধিক পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত। নারী-পুরুষ সবারই শরীর কাদামাটির গন্ধমাখা। একসময় তাঁদের নিপুণ হাতের শিল্পকর্মে কাদামাটি হয়ে উঠত নিত্যব্যবহার্য বাসন। ফুলের টব, নান্দা, খেলনাসহ কারুকাজ করা শোপিস এর মধ্যে অন্যতম। বেশ কদর ছিল এসব জিনিসের। কিন্তু এখন বদলে গেছে সময়, পাল্টে গেছে মানুষের অভ্যাস। ফলে কদর বেড়েছে এনামেল ও প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্রের। আর কদর হারিয়েছে মাটির তৈরি জিনিসপত্র। এ অবস্থায় এখন মাটির বলতে শুধু তৈরি হচ্ছে মাটির পাট বা চাকি।
মৃৎশিল্পের কারিগর স্বপন জানান, আগে এক ট্রলি মাটির দাম ছিল ২০০ টাকা। এখন বেড়ে হয়েছে হাজার-বারো শ টাকা। জ্বালানির দামও বেড়ে গেছে। কারখানার মালামাল তৈরি ও চুলার জন্য জমি লিজ নিতে হয়। ১ বিঘা জমি লিজ নিতে বার্ষিক ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা দিতে হয়। বছরের মাত্র আট-নয় মাস চলে এ ব্যবসা। আনুষঙ্গিক খরচ মিটিয়ে সমিতির কিস্তি পরিশোধ করাও তাদের জন্য কষ্টকর। তিনি বলেন, সরকার স্বল্প সুদে কুমোরদের ঋণের ব্যবস্থা করলে আবারও তারা স্বাবলম্বী হতে পারবে।
গ্রামের সুশান্ত পাল বলেন, ‘আমাদের গ্রামের নাম আমতৈল হলেও আশপাশের লোকজন আমাদের ডাকে চাকির গ্রামের মানুষ বলে। এখন গ্রামের যে বাড়িতেই যাাবেন দেখবেন পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বাড়ির উঠোনে মাটির চাকি তৈরির কাজে ব্যস্ত। দুয়েক বাড়ি পরপরই চাকি পোড়ানোর ভাটা দেখা যায়।’ গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. সজিব উদ্দিন বলেন, আমতৈল গ্রামে মাটির চাকি পোড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের কাঠ বা গার্মেন্টের পরিত্যক্ত ছিটকাপড় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে গ্রামের বিশেষ করে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্তান্ত হচ্ছে। অনেকে অল্প বয়সেই শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে চুল্লির ধোঁয়া অনেক ওপরে দেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি। তা না হলে অল্প বয়সেই এ গ্রামের মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে থাকবে।