সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

টিপু হত্যায় ৩৪ জনকে আসামি করে চার্জশিট

দাখিল করা হবে আজ

সাখাওয়াত কাওসার

দীর্ঘ ১৪ মাস তদন্ত শেষে বহুল আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের চার্জশিট জমা হচ্ছে আজ। জিসান আহমেদ, কানাডা পলাতক সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিক এবং ওমান থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা কিলিং মিশনের সমন্বয়কারী সুমন শিকদার ওরফে মূসাসহ চার্জশিটে ৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র।

জানা গেছে, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডে এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ২৪ জন। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেফতার নাসির উদ্দীন মানিক, সুমন শিকদার ওরফে মূসা ও শুটার মাসুম আহমেদ ওরফে আকাশ। সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন সোহেল হাওলাদার। চার্জশিট প্রস্তুতের ক্ষেত্রে কারাবন্দি মূসার জবানবন্দিই বেশি প্রভাব ফেলেছে। তবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিগুলো হত্যাকান্ডের পর অনেক দেরিতে হওয়ায় এর সমর্থনে অনেক প্রমাণই উপস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। একই সঙ্গে মূসার জবানিতে ‘এক্সেল সোহেল’ নামে একজনের নাম এলেও তার পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তবে এরই মধ্যে ১৮ এপ্রিল জামিন পেয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. মারুফ খান, মাহবুবুর রহমান টিটু ও মারুফ রেজা সাগর। এর আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন ইশতিয়াক আহম্মেদ জিতু, ইয়াসির আরাফাত সৈকত ও রাকিবুর রহমান। এ ছাড়া মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে ডিসেম্বরে   মশিউর রহমান একরাম এবং ২৬ জানুয়ারি জামিন পেয়েছেন আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ‘ঘাতক সোহেল’।

চার্জশিটে যা থাকছে : টিপুকে হত্যার আগে ১৫ ডিসেম্বর কিংবা ১৫ জানুয়ারি বায়তুল মোকাররমের ঠিক বিপরীতে একটি রুফটপ রেস্টুরেন্টে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ ওরফে মনসুর, মহানগর দক্ষিণের শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা সুমন শিকদার ওরফে মূসা, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল শাহরিয়ার, ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মারুফ রেজা ওরফে সাগর, মোল্লা রানা, আমিনুল ওরফে আমিনুর, বাবুল তালুকদার, রিফাত, টিটু, খাইরুলসহ ১০-১২ জন উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও কনফারেন্সে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও মানিক। মূলত ঠিকাদারি ব্যবসা, ডিশ-বাণিজ্য, আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি-বাণিজ্য, এজিবি কলোনি ও ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অনেকের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের কারণে সিদ্ধান্ত হয় টিপুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার। এ জন্য পাঁচজনকে নির্দেশ দেওয়া হয় টাকা সংগ্রহের। কিলিং মিশনে খরচের জন্য কাকে কত দেওয়া হবে তা ঠিক হয় ওই বৈঠকে। এর ১৫ দিন পর রাজধানীর বেইলি রোডের ফখরুদ্দীন বিরানি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় দফা বৈঠক। সেখানেও ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন জিসান ও মানিক। মূসার জবানিতে উঠে এসেছে টিপু হত্যার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা। জবানবন্দির শেষ পর্যায়ে বিচারকের কাছে মূসা বলেন, হত্যাকান্ডের পর সবাই এখন সুবিধা ভোগ করছে আর তিনি ফেঁসে গেছেন। খুনের মাত্র ১২ দিন আগে দেশ ত্যাগ করেন মূসা। সেখান থেকেই সমন্বয় করেন কিলিং মিশনের। পরে ওমান থেকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনে ডিবি পুলিশ।

 

দুটি বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়, নিজের এলাকায় নয়, হত্যা করতে হবে পাশের ওয়ার্ড এলাকায়। কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এলাকায় রেকি করতে। মূসার মাধ্যমে মোল্লা শামীমকে অস্ত্র ও বাইক ভাড়ার জন্য দেওয়া হয় ২ লাখ টাকা। মূসাই কিলার খোঁজার দায়িত্ব দেন মোল্লা শামীমকে। পরে শামীম এ গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেন শুটার আকাশের ওপর। কিলিং মিশনে ব্যবহৃত একটা অস্ত্র সরবরাহ করেন মগবাজারের জিতু। আরেকটা শামীমের নিজেরই। শুটার আকাশকে ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেলে করে নিজেই চালিয়ে নিয়ে যান মোল্লা শামীম। হত্যার জন্য সাগরের কাছ থেকে ১৫টি গুলি সংগ্রহ করা হয়। সাগরের ভাই রাকিব এগুলো বিজয় সরণিতে এসে দিয়ে যান। হত্যাকান্ডের দুই মাস আগে কমলাপুরের রূপালী যুব উন্নয়ন সংঘ ক্লাবে কিলিং মিশনের বিষয়ে সমন্বয় সভা হয়। সেখানে নাসির উদ্দীন মানিক, শুটার আকাশ, আরফান উল্লাহ ওরফে দামাল, মূসা, শামীম, নাসির উদ্দীন মানিক ছাড়াও আরও তিন-চারজন ছিলেন। মামলার সাক্ষী সোহেল হাওলাদার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে বলেন, ঘটনার ঠিক পরপরই তার বন্ধু বিডি বাবু তাকে ফোন দেন গাড়ির জন্য। বলেন, আকাশের মন খারাপ। কোথাও ঘুরতে যাবেন। পরে তিনি, বিডি বাবু ও আকাশ প্রথমে জয়পুরহাট যান। সব শেষ আকাশকে বগুড়ার একটি হোটেলে রেখে তারা ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার রাজিব আল মাসুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্রেফতার আসামিদের জবানবন্দিতে প্রাপ্ত তথ্যের দফায় দফায় যাচাই-বাছাই শেষে ৩৪ জনকে চার্জশিটে আসামি করা হয়েছে। আজ আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, গত বছর ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টায় রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা জামে মসজিদের কাছে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে নৃশংসভাবে গুলি করে খুন করা হয়। তিনি নিজের মাইক্রোবাসে বাসায় ফিরছিলেন। গাড়িটি যানজটে পড়ার পর একটি মোটরসাইকেলে আসা হেলমেট পরা এক যুবক টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। এ সময় এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি। এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন।

 

সর্বশেষ খবর