এক সময় বিএনপির শক্ত ঘাঁটি ছিল কুষ্টিয়া। দীর্ঘদিন এখানকার সবকটি আসনই বিএনপির দখলে ছিল। কিন্তু বদলে গেছে সে সময়। বিএনপির সেই দুর্গ এখন আর নেই। আওয়ামী লীগ ফাটল ধরিয়েছে বিএনপির সেই দুর্গে। পরপর তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগ এবং তাদের শরিক ১৪ দল সবগুলো আসনে বিজয়ী হয়েছে।
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দুর্গে আঘাত হেনে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন খন্দকার রশীদুজ্জামান দুদু। তাঁর মৃত্যুর পর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। আওয়ামী লীগের অন্যতম নীতিনির্ধারক মাহবুব-উল আলম হানিফ সে সময় কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের বাসিন্দা ছিলেন। জোটগত নির্বাচনের কারণে ওই আসনটি তাঁকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে ছেড়ে দিতে হয়। ফলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসন থেকে হানিফ প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মাহবুব-উল আলম হানিফ এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাহবুব-উল আলম হানিফ এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। প্রতি সপ্তাহে তিনি ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় ছুটে এসে গণসংযোগসহ নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। স্থানীয়রা বলছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে নানা কারণে কুষ্টিয়া জেলা ছিল অবহেলিত জনপদগুলোর মধ্যে অন্যতম। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাঁর জাদুকরি হাতের স্পর্শে বদলে যেতে থাকে অবহেলিত এই জনপদের চিত্র। এলাকার রাস্তাঘাট নির্মাণ, বাইপাস সড়ক, হরিপুর-কুষ্টিয়া সংযোগ সেতু, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজসহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দৃশ্যতই বদলে গেছে এ এলাকা। ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজের জন্য একদিকে যেমন তিনি জনপ্রিয়তার চূড়ায় অবস্থান করছেন, তেমনি নির্বাচনী এলাকার জনগণের কাছেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়ে আছেন। তাই সার্বিক বিবেচনায় নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মাহবুব-উল আলম হানিফের কোনো বিকল্প নেই। তবে তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের মানোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, বিএমএ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. এ এফ এম আমিনুল হক রতন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমে তলে তলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপি থেকে এ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামিম উল হাসান অপু বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেলেও আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী মাহবুব-উল আলম হানিফের কাছে পরাস্ত হন। অপরদিকে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নাফিজ আহমেদ খান টিটু। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ ইনু) প্রার্থী জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ফরহাদ হুসাইন ভিতরে ভিতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী বলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য আমাদের নেতা মাহাবুব-উল আলম হানিফের নেতৃত্বে যে কোনো সময়ের চেয়ে কুষ্টিয়া জেলায় আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সব রকম প্রস্তুতি নেতা-কর্মীদের রয়েছে। নির্বাচন ও সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামিম-উল হাসান অপু বলেন, এই মুহূর্তে আমরা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না। তবে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মতো প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।