তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলা নিয়ে সবচেয়ে বড় সংসদীয় আসন সুনামগঞ্জ-১। এ আসনে বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছড়াছড়ি।
দুর্গম হাওর অধ্যুষিত এই আসনের বেশির ভাগ এলাকায় এখনো কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। ফলে জনগণের উন্নয়ন আকাক্সক্ষার প্রত্যাশা পূরণে নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
আগামী মেয়াদে হাওরে সুদীর্ঘ উড়াল সড়ক নির্মাণ করে চার উপজেলাকে সড়ক যোগাযোগের মূলধারার সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে গেল বছর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। সম্প্রতি প্রকল্পের একটি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করেছে এলজিইডি। হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলার সঙ্গে নেত্রকোনা জেলার আধুনিক যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি এই দুই জেলার পাঁচটি উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন, হাওর এলাকার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষিপণ্য ও মৎস্য সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধি, দ্রুততম সময়ে ও সহজে পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত, হাওরকেন্দ্রিক পর্যটনের প্রসার এবং মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে।
এর বিপরীতে বিরোধী দল বিএনপির প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রয়েছে এ এলাকার বোরো চাষিদের ফসল অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষায় কার্যকরী ও ঠেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলা। পাশাপাশি গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ফসল উৎপাদনে আধুনিকায়ন, কর্মসংস্থানের অভাবে দরিদ্র মানুষের এলাকা ত্যাগ রোধে কার্যকরী উদ্যোগ, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকার প্রভৃতি মৌলিক উন্নয়নের পাশাপাশি যোগাযোগ, শিক্ষা ও চিকিৎসার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বিএনপি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আয়তন ও ভোটার সংখ্যার বিপরীতে এই আসনে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে প্রার্থী সংখ্যাও বেশি। জেলার অর্থনৈতিক জোগানের বৃহৎ এই আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের একে অপরের সঙ্গে রয়েছে বিরোধ। বালু-পাথর ও জলমহালে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই বিরোধ বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের মধ্যে চরমে।
দীর্ঘদিন ধরে যেসব সম্ভাব্য প্রার্থী নানা ইস্যুতে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন, শেষ মুহূর্তে এসে বেড়েছে তাদের তৎপরতা। দলীয় কর্মকাণ্ডে আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় রয়েছেন তারা।
সুনামগঞ্জ-১ আসনে টানা তিন মেয়াদ ধরে সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। নিজ সমর্থকদের কাছে ‘হাওররত্ন’ উপাধি পাওয়া এই সংসদ সদস্য প্রায়ই বিতর্কের জন্ম দিয়ে হয়েছেন সংবাদের শিরোনাম। তাঁকে এবার ‘মসনদ’ থেকে হঠাতে অপরাপর সম্ভাব্য প্রার্থীরা একজোট হয়ছেন। তাদের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শামীমা আক্তার খানম ও জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. সেলিম আহমদ বর্তমান সংসদ সদস্য রতন বিরোধী প্রচারণা এগিয়ে রয়েছেন। দলীয় হাইকমান্ড তাকে বিবেচনায় নেবে বলে দাবি সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামীমার। শ্রমিক নেতা সেলিমও নির্বাচনকে সামনে রখে এগিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য এবং আওয়ামী যুবলীগের সদস্য মো. গোলাম কিবরিয়া। এ ছাড়া এ আসনের দলীয় মনোনয়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচার প্রচারণা ও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ রফিকুল হক, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব বিনয় ভূষণ তালুকদার সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রঞ্জিত সরকার। গত নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজির হোসেন। তিন বারের সাবেক এই সংসদ সদস্যকে এবারও নিজ দলের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তারই এক সময়ের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আনিসুল হক রাজনীতির মাঠে আছেন গত এক দশক ধরে। আরেক সাবেক ছাত্রনেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে মাঠে কাজ করছেন। যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফেন্দীকে নানা ইস্যুতে এলাকায় সক্রিয় থাকতে দেখা যায়।