গতকাল ২ অক্টোবর ছিল মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন ও বিশ্ব অহিংস দিবস। মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনটি জাতিসংঘ ঘোষণার আলোকে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় শান্তি ও সম্প্রীতির দিবস হিসেবে। প্রতি বছর গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত এ দিবসটি পালন করে আসছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সন্ত্রাসপীড়িত বর্তমান বিশ্বে শান্তি, সম্প্রীতি ও সহনশীলতার গুরুত্ব ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। রবীন্দ্রনাথের নানা সৃষ্টিকর্মেও উঠে এসেছে অহিংসতা ও সম্প্রীতির কথা।
গীতি-নৃত্য-নাট্য চণ্ডালিকা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় এবারের বিশ্ব অহিংসা দিবস পালন করেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
নাচের দল স্পন্দন নৃত্যদলের শিল্পীদের পরিবেশনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত নৃত্য-নাট্য চণ্ডালিকার পরতে পরতে উঠে আসে সম্প্রীতি ও অহিংসতার নানা চিত্র। সুরের সঙ্গে নাচের সরল সমীকরণে অনন্য হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তন। বৌদ্ধ সাহিত্যের কাহিনি থেকে ‘চণ্ডালিকা’র মূল ভাবটি গ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এ নৃত্যনাট্যের ঘটনাস্থল শ্রাবস্তী নগরী। বৌদ্ধ সন্ন্যাসী আনন্দ এক গ্রীষ্মের প্রখর দুপুরে বিহারে ফিরে যাওয়ার সময় তৃষ্ণা বোধ করেন। তিনি দেখতে পেলেন একজন তরুণী কুয়ো থেকে জল তুলছে। সে এক চণ্ডালকন্যা, তার নাম প্রকৃতি। তার কাছে জল চাইলেন আনন্দ। কিন্তু তাকে তো সবাই চণ্ডালকন্যা বলে অস্পৃশ্য মনে করে। তাই সংকোচভরে প্রকৃতি আনন্দকে বলে যে, সে চণ্ডালকন্যা আর তার কুয়োর জল অশুচি। আনন্দ তাকে বলেন যে, তিনি যে মানুষ, প্রকৃতিও সেই মানুষ। সব জলই তীর্থজল, যা তৃষ্ণার্তকে তৃপ্ত করে, স্নিগ্ধ করে। আনন্দের এ ব্যবহারে, সেই সঙ্গে তার রূপে মুগ্ধ হলেন প্রকৃতি। নিজের জীবন সম্পর্কে ভাবনা বদলে গেল তার। এ যেন তার নতুন জন্ম। তার হাতের এক গণ্ডূষ জল গ্রহণ করে আনন্দ তার জীবনের সব অপমান ধুয়ে দিয়ে গেছেন। আনন্দকে পেতে চাইল প্রকৃতি। কিন্তু তাকে পাওয়ার কোনো উপায় না দেখে সে তার মায়ের সাহায্য চাইল। তার মা জাদুবিদ্যা জানত। মন্ত্র পড়ে এবং জাদুশক্তির জোরে তার মা শেষ পর্যন্ত আনন্দকে টেনে আনে। সে প্রকৃতিকে তার মায়াদর্পণে দেখতে বলে আনন্দকে। কিন্তু আনন্দের ক্লান্ত, ম্লান রূপ সহ্য করতে পারে না প্রকৃতি। কোথায় গেল তার সেই দীপ্ত উজ্জ্বল, স্বর্গের আলোর মতো রূপ! সে পা দিয়ে ভেঙে ছড়িয়ে ফেলল তার মায়ের মন্ত্রের সব উপকরণ। তারপর প্রকৃতি ও তার মা দুজনেই ক্ষমাপ্রার্থনা করে আনন্দের কাছে। তাদের এই নতুন উপলব্ধির মধ্য দিয়েই শেষ হয় রবীন্দ্রনাথের ‘চণ্ডালিকার কাহিনি। এর আগে বিশেষ আলোচনায় অহিংস আন্দোলনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।স্বাধীনতা জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা জাদুঘরে শুরু হলো বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র ও চলচ্চিত্রের নিয়মিত প্রদর্শনী। গতকাল জাদুঘর মিলনায়তনে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
কবি রাধাপদ রায়ের ওপর হামলার নিন্দা উদীচীর : কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার স্বভাবকবিখ্যাত রাধাপদ রায়ের ওপর দুর্বৃত্তদের ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে জানান, একজন বর্ষীয়ান কবির ওপর এ ধরনের হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা অবিলম্বে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান।