শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

কঠোর নিরাপত্তায় শুরু বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক এবং গাজীপুর ও টঙ্গী প্রতিনিধি

কঠোর নিরাপত্তায় শুরু বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে মুসল্লিদের ঢল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। বাদ ফজর আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ইজতেমা। দুই পর্বে বিভক্ত ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নেবে বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। ইজতেমা আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন ও মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রথম পর্বে দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক মুসল্লি অংশ নিচ্ছেন। তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।

মঙ্গলবার বিকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে দলে দলে আসতে শুরু করেন। এরই মধ্যে ১৬০ একরের ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। অনেকেই মূল ময়দানে জায়গা না পেয়ে প্রবেশপথের দুই পাশে অবস্থান নিয়েছেন। মাঠের উত্তর-পশ্চিম দিকে বিভিন্ন দেশের অতিথিদের জন্য আন্তর্জাতিক নিবাস তৈরি করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাস, ট্রাক, ট্রেন ও হেঁটে টুপি-পাঞ্জাবি পরা মুসল্লিরা টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আসছেন। অব্যাহত থাকবে রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত। ময়দানের পশ্চিমে তুরাগ নদের পূর্ব পাশে নামাজের মিম্বর এবং উত্তর-পশ্চিম পাশে বিদেশি মুসল্লিদের কামরার পাশে বয়ান মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। নামাজের মিম্বর থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমাম এবং বয়ানের মঞ্চে বয়ানকারী অবস্থান করেন। বয়ান মঞ্চ থেকে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করা হবে। ইজতেমার প্রচলিত রেওয়াজ অনুসারে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ছাড়াই শুরু হবে। সভাপতিহীন এই মহাসমাবেশে থাকছেন না প্রধান বা বিশেষ অতিথি। নাম-পদবি ছাড়াই বিভিন্ন দেশের ওলামায়ে কেরাম বয়ান পেশ করবেন। এবার চট সংকট থাকায় নিজ উদ্যোগে শামিয়ানা ও চট টাঙানোর কাজ করতে দেখা গেছে মুসল্লিদের। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ দুপুর দেড়টার দিকে কাকরাইল মসজিদের মুরব্বি মাওলানা জুবায়ের প্রথম দিন জুমার নামাজে ইমামতি করবেন। ১৬০ একরের পুরো ইজতেমা ময়দান ছাপিয়ে কামারপাড়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের অলিগলিতেও জুমার নামাজে অংশ নেবেন মুসল্লিরা। জুমার নামাজে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার (গতকাল) রাত থেকেই তাবলিগ জামাতের মুসল্লি ছাড়াও গাজীপুর ও আশপাশের জেলা থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নেন। সূত্র জানায়, ৩৬টি দেশের প্রায় ১ হাজার ৩৭৫ জন বিদেশি মেহমান ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান করে ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন। প্রথম পর্বের মিডিয়াবিষয়ক জিম্মাদার মুফতি জহির ইবনে মুসলিম জানান, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের বিভিন্ন খিত্তায় নির্ধারিত বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা অবস্থান নিচ্ছেন। তাদের সব ধরনের সেবা প্রদানে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রায় ১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মাঠটিতে বাঁশের খুঁটির ওপর ছাউনির মধ্যে মুসল্লিদের বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক। লাগানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আবদুন নূর জানান, বৃহস্পতিবার (গতকাল) বাদ ফজর দিল্লির মাওলানা আহমেদ লাট বয়ান করেন। তরজমা করেছেন বাংলাদেশের মাওলানা ওমর ফারুক। বাদ জোহর বয়ান করেছেন বাংলাদেশের মাওলানা রবিউল হক। বাদ আসর বাংলাদেশের মাওলানা ফারুক, বাদ মাগরিব বয়ান করেন হিন্দুস্তানের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। এদিকে শীতের প্রকোপের মধ্যে বুধবার দিবাগত রাতে এক পশলা বৃষ্টিতে ভোগান্তি বেড়ে যায় ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের। বিশেষ করে ময়দানের পূর্ব পাশে ও মহাসড়কে পাশে অবস্থান নেওয়া মুসল্লিরা বেশি বিপাকে পড়েন।

বিদেশি মেহমানরা আসছেন বেনাপোল বন্দর দিয়ে : বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্য থেকে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।

বিদেশি মুসল্লিরা বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে বাস কিংবা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনযোগে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে আসছেন। তবে ইমিগ্রেশনের ভিতরে স্বাস্থ্য-পরীক্ষা করা হয়েছে মুসল্লিদের। ২ হাজারের বেশি বিদেশি মেহমান বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে প্রবেশ করেছেন বলে জানা গেছে।

বিশ্ব ইজতেমায় ভাসমান সেতু এবং ওয়াটার বাউজার স্থাপন করেছে সেনাবাহিনী : ২-৪ ফেব্রুয়ারি এবং ৯-১১ ফেব্রুয়ারি দুই পর্বে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমার মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে তুরাগ নদের ওপর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পাঁচটি ভাসমান সেতু স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ওজু এবং খাবার পানির জন্য দুটি ওয়াটার বাউজার সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহ করবে সেনাবাহিনী। আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে সেনা সদস্যরা ইজতেমা এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন করে এসব জনকল্যাণমূলক কাজ সম্পন্ন করছেন। পাশাপাশি ইজতেমা এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের একটি বোম্ব ডিসপোজাল দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, যে কোনো জাতীয় প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সবসময় দেশের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জনকল্যাণমূলক কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরের মতো এবারও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিশ্ব ইজতেমা এলাকায় ভাসমান সেতু ও ওয়াটার বাউজার স্থাপন করা হয়েছে।

ইজতেমার সাফল্য কামনা বিএনপির : বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক সাফল্য কামনা করেছে বিএনপি। এক বিবৃতিতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, আজ শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক সাফল্য কামনা করছি। দেশ-বিদেশ থেকে আসা ইজতেমা ময়দানে লাখো লাখো মুসলমান যাতে নির্বিঘ্নে নামাজ ও জিকির-আজকার করতে পারেন, সেজন্য কায়মনোবাক্যে মহান আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করছি।

সর্বশেষ খবর