শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

চা-পাতার দাম কমে যাওয়ায় অশনিসংকেত

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

কৃষিনির্ভর দিনাজপুর জেলায় জলোচ্ছ্বাস, ঝড়সহ প্রাকৃতিক তেমন দুর্যোগ নেই। মাটিও উর্বর। দেশের খাদ্যঘাটতি পূরণে যথেষ্ট অবদান রাখছে এ জেলা। এ ছাড়া ধান, লিচু, ভুট্টার পাশাপাশি দিনাজপুরের সমতল ভূমিতে চা চাষের সাফল্যে দিন দিন বেড়েই চলে চা চাষ। লাভের আশায় পতিত জমি ছাড়াও অনেকে ধানের জমিতেও চা চাষ শুরু করেন। এ অঞ্চলের চা চাষ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে শুরু করে। কিন্তু চা পাতার দাম কমে যাওয়ায় এবং খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্ভাবনায় অশনি সংকেত বললেন চাষিরা। হিমালয়ের পাদদেশে দিনাজপুর অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া উপযুক্ত থাকায় চা ভালো উৎপাদন হওয়ায় পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীর সাফল্যের পর দিনাজপুরেও চা চাষের পরিধি বাড়ে। আগামীতে এ চা চাষ বদলে দিতে পারে দিনাজপুরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। চা চাষ তৈরি করেছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। বোচাগঞ্জের চা চাষি ফজলে রাব্বির জানান, ২০১৮ সালে পঞ্চগড় থেকে চা গাছের চারা এনে তিন একর জমিতে রোপণ করি। প্রায় ১৮ হাজার চায়ের গাছ আছে। খরচ হয় প্রায় ১৬ লাখ টাকা। রোপণের দুই বছর পর থেকে চা পাতা বিক্রি করছি। বছরে কমপক্ষে আটবার চা পাতা বিক্রি করা যায় এবং প্রতিবারেই চা পাতা বেশি পাওয়া যায়। বর্তমান তিনি ৪৫-৫০ দিন পর পর চা পাতা বিক্রি করেন। একটি চা কোম্পানি বাগানে এসে চা পাতা নিয়ে যায়। প্রথমদিকে প্রতি কেজি চা পাতা ২০-২৭ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি চা পাতা ৬-৭ টাকা। এখন যে দাম তাতে এ চা বাগানের প্রসারের পরিবর্তে বাগান তুলে দেবে চাষি। কারণ চা পাতা গাড়িতে নিয়ে যাওয়া, কাটানো, নামানো শ্রমিকসহ খরচ পড়ে যায় কেজিপ্রতি দুই টাকা এবং নিজের শ্রম, শ্রমিক, সার-কীটনাশকসহ খরচ পড়ছে কেজিপ্রতি তিন টাকা। আবার এই চা পাতা বিক্রির টাকা বাকি রাখে পরবর্তী চা পাতা বিক্রি পর্যন্ত। দিন যতই যচ্ছে ততই বাড়ছে চা পাতার পরিমাণ। এখন সর্বশেষ ডিসেম্বরে ৫-৬ হাজার কেজি চা পাতা বিক্রি করেছি। চা বাগান করার পর আজ অবধি বিনিয়োগের টাকা ওঠাতে পারেনি। চা বাগানে গাছ বড় হচ্ছে অন্যদিকে দাম কমে যাচ্ছে। আমার মতো চা চাষিসহ অনেকে এসব চিন্তা করছেন। তিনি বলেন, এই বাগানের উদ্যোক্তা মূলত আমার বড় ভাই ফজলে মুকিম। চা গাছে ছায়া দিতে চা বাগানে আমলকীর গাছ রোপণ করা হয়েছে। এ ছাড়া খরার সময় পানি দিয়ে গাছ সতেজ রাখতে হয়। অপরদিকে, বীরগঞ্জের ঝাড়বাড়ির চা চাষি আখতার আলী জানান, ২০১৯ সালে এক একর ২০ শতক জমিতে চা চাষ শুরু করি। চারা রোপণসহ বিনিয়োগ করি ৮ লাখ টাকা। সব শেষ গত ডিসেম্বরে বাগান থেকে সাড়ে ৩ হাজার কেজি চা পাতা বিক্রি করেছি। স্থানীয় শ্রমিক, সার, কীটনাশক, ওষুধ সবকিছুর দাম বেড়েছে। প্রথমদিকে চা পাতার কেজি ২৫ টাকার ওপরে বিক্রি করলেও এখন দাম কমে মাত্র ৬-৭ টাকা কেজি। এ দামে লোকসান হবে, তাই পাতা তোলা বন্ধ রেখেছি। দাম না বাড়ালে বাগান তুলে দেব। বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের দিনাজপুর অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা সাইদুল ইসলাম জানান, দিনাজপুর অঞ্চলে চা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকায় একটি প্রকল্প নেওয়া হয় এবং বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়েছে। দিনাজপুর অঞ্চলে বর্তমানে ৮৯ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর