আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে ঝুঁকি বিবেচনায় এখনো পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়নি কারফিউ। জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখনো সেনা টহল অব্যাহত রয়েছে। কাউকে সন্দেহ হলেই চালানো হচ্ছে তল্লাশি। তবে ধীরে ধীরে কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়ানো হচ্ছে। নতুন সপ্তাহের প্রথম তিন কর্মদিবসে (রবি থেকে মঙ্গল) অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। অন্যান্য জেলায়ও কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়ছে। গতকাল থেকে অফিস সময়সূচি ৪ ঘণ্টার বদলে ৬ ঘণ্টা করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে অফিস খোলা থাকবে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। তবে ব্যাংকে লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। কারফিউ শিথিল থাকবে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
গতকাল রংপুর বিভাগের আট জেলায় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। ময়মনসিংহে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত, রাজশাহীতে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত, বরিশাল জেলা ও নগরে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত, খুলনা জেলায় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত, সিলেটে সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। আজ সোমবার সিলেটে সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা, রংপুর বিভাগে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা ও চট্টগ্রামে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। কারফিউ শিথিল করায় গতকাল ভোর থেকেই কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে রাজধানী। অলিগলি থেকে মূল সড়কের পাশের দোকানপাট, অফিস, কারখানা খুলে যায়। সরকার এই তিন দিন দেশের সব সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করলেও দীর্ঘদিনের কাজের ঘাটতি পূরণে কিছুটা আগেভাগেই কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে রাজধানী। বিশেষ করে অনেক বেসরকারি অফিস, কারখানা ৮টার মধ্যেই চালু হয়ে যায়। সাতসকালে খুলে যায় দোকানপাট, রেস্তোরাঁ। অনেক দিনের জমানো কাজ সারতে প্রচুর মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। তবে পুনরায় কারফিউ শুরু হওয়ায় সন্ধ্যার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সড়ক ও স্থাপনার সামনে অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী। গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী ক্রম অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে গত ২০ জুলাই ভোর হতে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। জনগণের স্বার্থে ও রাষ্ট্রের যে কোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে। দেশের সংবিধান সমুন্নত রেখে প্রচলিত আইনের আওতায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, দেশবাসীর জানমালের নিরাপত্তা ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি এবং একের পর এক রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটে। পরের দিনও সহিংসতা এবং প্রাণহানি চলতে থাকায় সেদিন মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়। সারা দেশে মোতায়েন করা হয় সেনা সদস্যদের। শুরুতে জনগণের বাজার করার জন্য দুই ঘণ্টা করে কারফিউ শিথিল রাখা হয়। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় শিথিলের মেয়াদ ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়। বুধবার থেকে সীমিত পরিসরে অফিস চালু হয়। গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শিথিল ছিল কারফিউ। শুক্র ও শনিবার ঢাকায় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল রাখার ঘোষণা আসে।