খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধি করা ও ভেষজগুণে সমৃদ্ধ আদার চাষ করে বাজিমাত করেছেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আদাচাষি মহাসিন আলী। মহেশপুর কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রথম বারের মত তিনি পতিত জমির ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে বস্তায় (ব্যাগিং পদ্ধতিতে) আদা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। তার দেখাদেখি গাড়াবাড়িয়া গ্রামের অনেকেই বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে মহাসিন আদা চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন, এরপর প্রনোদনার বীজ সার ও তাদের পরামর্শ নিয়ে চাষ শুরু করেন। প্রথমে ছাই, জৈব সার ও বালু মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করেন। পরীক্ষামূলক ভাবে ৪ কাঠা জমিতে সাড়ে ৪শ’ বস্তায় মাটি ভরাট করে টবের মতো করেন। প্রতিটি বস্তায় তিন থেকে চারটি করে আদার চারা রোপণ করেন। মহাসিন আলী জানান, এভাবে আদা চাষে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো পতিত জমিতে খুবই সীমিত খরচ আর অল্প শ্রমে চাষ করা সম্ভব। একেকটি বস্তায় প্রায় দুই কেজি পর্যন্ত আদা পাওয়া যাবে উল্লেখ করে তিনি জানান, আদা গাছে পানির চাহিদা অনেক কম। আবার সার বা কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় খুবই কম। মাঝে মধ্যে পাতা মরা রোগ প্রতিরোধে কিছু ওষুধ স্প্রে করতে হয়। এভাবে আদা চাষ করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। তিনি জানান, প্রথম অবস্থায় অল্প পরিসরে চাষ করেছি। আগামীতে আরও বড় পরিসরে আদা চাষ করবো। একটি বস্তায় চারা রোপণ করতে মোট খরচ প্রায় ৪৫ টাকা। কিন্তু একেকটি বস্তায় আদা পাওয়া যাবে প্রায় দেড় থেকে দুই কেজি। দুই কেজি আদার বাজার মূল্য ২০০ টাকা।স্থানীয় বাসিন্দা জালাল হোসেন জানান, এভাবে আদা চাষ এর আগে দেখিনি। এটি দেখার পরে আমাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অমেলেন্দু কুমার প্রমানিক জানান, অনেকের আদা চাষের উঁচু জমি নেই। তাই পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাড়ির ছাদ ও পরিত্যক্ত জমিও কাজে লাগাতে পারবে অনেকে। গাড়াবাড়িয়া ছাড়াও বগা, পাতিবিলা, নাটিমা এলাকায়ও আদার চাষ হচ্ছে।মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইয়াসমিন সুলতানা জানান, আদা চাষে খুব বেশি খরচ নেই। একটি বস্তায় ১০ কেজি মাটি, চার কেজি জৈব সার, এক কেজি ভার্মি কম্পোস্ট দিতে হবে। সেখানে আদার বীজ লাগিয়ে দিলে ১০ মাসে ভালো ফলন আসে। পরীক্ষামূলকভাবে বস্তায় আদা চাষ মহেশপুরে ভালো সাড়া ফেলেছে। উপজেলায় ১৩ হাজার ৭০০ বস্তায় আদার চাষ হয়েছে। সেখানে ১০-১২ টন আদা উৎপন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।