মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র দেড় মাস বাকি। এরই মধ্যে মূল দুই প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের জনসমর্থনের ওপর অনেক জরিপ হয়েছে। সর্বশেষ জরিপে উঠে এসেছে দুজনেই সমানে সমান রয়েছেন। সে কারণে এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে।
রয়টার্স, বিবিসি, আল জাজিরাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গেল দুই সপ্তাহ ধরে জনমত জরিপে ট্রাম্প ও কমলা কার্যত একই জায়গায় আটকে আছেন। উভয়ের চলতি অবস্থা ৫০-৫০। যদিও কমলার জয়ের ব্যাপারে নির্বাচনি বিশেষজ্ঞরা এখনো পুরোপুরি আস্থাবান নন। বলা হয়ে থাকে, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নামজাদা জনমত জরিপকারী হলেন নেইট সিলভার। কয়েক দিন আগে তিনি জানিয়েছিলেন, ভোট হলে কমলা নয়, ট্রাম্পই জিতবেন। নেইটের এমন মন্তব্যের পর নানা মহলের সমালোচনার শিকার হন তিনি।
পরবর্তীতে সমালোচনা ঠেকাতে অথবা নতুন উপাত্ত হাতে পেয়ে নেইট সিলভার অবশ্য তার মত বদলেছেন। জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে সফল বিতর্কের পর সামান্য হলেও কমলার জনসমর্থন বেড়েছে। এই উপাত্তের ভিত্তিতে সিলভারের নতুন নির্বাচনি মডেলে এই মুহূর্তে কমলা ও ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা ৫০-৫০। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে যে রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে তাতে জিততে হলে কমলা বা ট্রাম্পকে পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে জয় পেতে হবে। ২০২০ সালে বাইডেন প্রথাগত ডেমোক্র্যাট প্রধান অঙ্গরাজ্য ছাড়াও এই তিন অঙ্গরাজ্যে জিতেছিলেন। ফলে জিততে হলে কমলাকেও একই ফল অর্জন করতে হবে। এ ছাড়া সম্ভাব্য বিকল্প হলো দক্ষিণের চারটি অঙ্গরাজ্য- নেভাদা, অ্যারিজোনা, জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনা। এই চার অঙ্গরাজ্যেই কমলা ও ট্রাম্পের অবস্থান সমানে সমান। ডেমোক্র্যাটদের বিশ্বাস, সব কটিতে না হোক, এর দুটি বা তিনটিতে তাদের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা বলছেন, নর্থ ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প যদি পেনসিলভানিয়ায় জয় নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলেই হোয়াইট হাউসে তার পুনঃপ্রবেশ অনিবার্য। এ মুহূর্তে সব লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু পেনসিলভানিয়া, যার থলিতে রয়েছে ১৯টি ইলেকটোরাল ভোট। সদ্য পাওয়া জরিপ অনুসারে এখানে কমলা ও ট্রাম্পের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। এদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে বসেছেন, আগামী ৫ নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি যদি প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের কাছে তিনি হেরে যান, তবে এর দায় ইহুদি-আমেরিকান ভোটারদের ওপর বর্তাবে। ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি-আমেরিকান কাউন্সিল ন্যাশনাল সামিটে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বক্তৃতার সময় এ মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। এ সময় আমেরিকান-ইহুদিদের মধ্যে হ্যারিসকে সমর্থন করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে দুঃখও প্রকাশ করেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা জয়ী হলে সম্ভবত দুই বছরের মধ্যে ইসরায়েলের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। আর এমন পরিণতির জন্য ইহুদিরা আংশিকভাবে দায়ী থাকবেন। কেননা, তাদের মধ্যে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প বলেন, ‘এই নির্বাচনে যদি আমি জয়ী না হই, তবে সত্যিই এটি ইহুদি জনগণের ওপর প্রভাব ফেলবে। কেননা, যদি ৪০-৬০ শতাংশ মানুষ (আমেরিকান ইহুদিদের) শত্রুকে ভোট দেয়, তবে আমার মতে, দুই বছরের মধ্যে ইসরায়েলের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।’
জনমত জরিপে আমেরিকান-ইহুদিদের মধ্যে ৬০ শতাংশ কমলাকে সমর্থন দিয়েছে বলে একটি জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে ট্রাম্প এ কথা বলেন। কিন্তু ট্রাম্প ঠিক কোন ভোট জরিপের উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন তা স্পষ্ট ছিল না। তবে সাম্প্রতিক একটি পিউ গবেষণা জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের চেয়ে কমলার পক্ষে আমেরিকান-ইহুদিদের সমর্থন বেশি। ওই জরিপে কমলাকে সমর্থন জানিয়েছেন ৬৫ শতাংশ এবং ৩৪ শতাংশের সমর্থন ছিল ট্রাম্পের পক্ষে। এ সময় বিগত ২০১৬ ও ২০২০ সালের নির্বাচনে আমেরিকান-ইহুদিদের ৩০ শতাংশেরও কম ভোট পাওয়া নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ট্রাম্প। ২০১৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হলেও ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে হেরেছিলেন তিনি।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী নির্ধারণে ইহুদিদের ভোট সামান্যই পরিবর্তন আনতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতাপূর্ণ পেনসিলভানিয়ায় ৪ লাখেরও বেশি ইহুদি রয়েছে। ওই অঙ্গরাজ্যে ২০২০ সালে ৮১ হাজার ভোটে জিতেছিলেন বাইডেন।