শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায় টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার উন্নতি হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর বন্যাকবলিত এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ ভেসে উঠতে শুরু করেছে। এ তিন জেলার বন্যায় এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। তাদের মধ্যে আটজন শেরপুর এবং দুজন ময়মনসিংহের। ওই তিন জেলার বন্যায় ২ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এদিকে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বজ্রপাতে পাঁচজনের মৃত্যু ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
শেরপুর : শেরপুরের সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীতে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার উন্নতি হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর বন্যাকবলিত এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ ভেসে উঠতে শুরু করেছে। অনেকেই বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে বাড়িঘরে স্যাঁতসেঁতে অবস্থা ও কাদা পানিতে একাকার হয়ে থাকায় এবং চুলায় পানি ওঠায় রান্নাবান্না করতে পারছেন না বেশির ভাগই।
গ্রামীণ রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোথাও রাস্তা ভেঙে গেছে, কোথাও বড় বড় গর্ত, খানাখন্দে ভরে গেছে। আবার কোথাও এখনো জলাবদ্ধতা রয়ে গেছে। বন্যার কারণে রোপা আমন ধান ও সবজিসহ সব ধরনের ফসলের এবং মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া খেতের ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ায় আগামী দিনের ভাবনায় অনেক কৃষক পরিবার দিশাহারা।
ময়মনসিংহ : হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। গতকাল বুধবার ভোর থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। এতে বন্যাকবলিত বেশির ভাগ এলাকার পানি নিচের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পানি কমলেও মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। সহযোগিতা না পাওয়ায় হতাশ বানভাসিরা। ময়মনসিংহের তিন উপজেলায় এখনো পানিবন্দি রয়েছে লাখো মানুষ। বন্যার পানিতে এ পর্যন্ত ফুলপুর উপজেলাতেই দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
নেত্রকোনা : পানি কমতে শুরু করলেও নষ্ট হয়ে গেছে বিস্তর ফসলি জমি। কংস নদের পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও নিষ্কাশন সুবিধা না থাকায় ধীরগতিতে নামছে পানি। যে কারণে গেল পাঁচ দিনে জেলার চার উপজেলার ২২ হাজার হেক্টর জমির ফসল একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক এলাকায় এখনো পানিবন্দিদের রান্না খাওয়া অনিশ্চিত। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের চোখে-মুখে অন্ধকার। ভুক্তভোগীরা চান স্থায়ী সমাধান।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বজ্রপাতে পাঁচজনের মৃত্যু : কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বজ্রপাতে এক নারীসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার হোসেনাবাদ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। দৌলতপুর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান জানান, উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ এলাকার গৈরীপাড়া মাঠে কাজ করছিলেন বেশ কয়েকজন কৃষক। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে মাঠের পাশের একটি মাচাইয়ে আশ্রয় নিলে তীব্র বজ্রপাতে কৃষক নিজাম (৪৮), তরিকুল (২৫) আওলাদ (৬০) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ সময় আরও ছয়জন আহত হন। পরে সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমন নামের আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের সবার বাড়ি হোসেনাবাদ এলাকায়। এ ছাড়া, উপজেলার ফারাকপুরে পুকুরে গোসল করা অবস্থায় জহুরা খাতুন (৪০) নামে এক নারী বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন।