সিলেটে একের পর এক মিলছে গ্যাসের আধার। চলতি বছরে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের (এসজিএফএল) আওতাধীন পাঁচটি কূপে মিলেছে গ্যাসের সন্ধান। নতুন কূপের পাশাপাশি পুরনো পরিত্যক্ত কূপেও পাওয়া গেছে গ্যাসস্তর। ফলে দেশের গ্যাস ভান্ডারে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে আগামী বছরের মধ্যে বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি গ্যাস জাতীয় গ্রিড লাইনে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
সিলেটে গ্যাস প্রাপ্তিতে সর্বশেষ সুখবর আসে গত ২২ অক্টোবর। ওইদিন এসজিএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের পরিত্যক্ত ৭ নম্বর কূপের সংস্কার কাজ শেষে দুটি স্তরে বিপুল পরিমাণ গ্যাস মজুতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, ৭ নম্বর কূপের ১ হাজার ২০০ মিটার গভীরে গ্যাস পাওয়া গেছে। প্রতিদিন ওই স্তর থেকে ৭-৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরীক্ষামূলকভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে। এর আগে ১৪ আগস্ট একই কূপের ২ হাজার ১০ মিটার গভীরে আরও একটি স্তরে গ্যাস পাওয়া যায়। যে স্তর থেকে দৈনিক ৬-৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে। মিজানুর রহমান জানান, সবকটি কূপ মিলিয়ে বর্তমানে দৈনিক ৬০-৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হবে ৭ নম্বর কূপের ৭-৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে এই কূপের গ্যাস গ্রিড লাইনে সরবরাহ করা হবে। এসজিএফএল সূত্র জানায়, বর্তমানে উৎপাদনে থাকা কোম্পানির আওতাধীন কূপগুলো থেকে দৈনিক ৬০-৭০ মিলিয়ন গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হলেও চলতি বছরের মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সরবরাহের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে।
আর সরকারের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে ২০২৫ সালের মধ্যে এসজিএফএল জাতীয় গ্রিড লাইনে দৈনিক ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ করার সম্ভাবনা রয়েছে। যা দেশের গ্যাস সংকট নিরসনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। সূত্র জানায়, এক বছরে এসজিএফএলের আওতাধীন পাঁচটি কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে কোনো কূপ দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত ছিল। নতুন করে সংস্কার ও খনন করে মিলেছে গ্যাসের নতুন স্তর। চলতি বছরের ২৪ মে খনন কাজ শেষে এসজিএফএলের মালিকানাধীন কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ডের ৮ নম্বর কূপে ৩ হাজার ৪৪০ থেকে ৩ হাজার ৪৫৫ হাজার ফুট গভীরে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। ওই কূপ থেকে দৈনিক প্রায় ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিড লাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে। কূপটি থেকে আগামী ২০ বছর গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে বলে ওই সময় জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২৭ জানুয়ারি এসজিএফএলের আওতাধীন রশিদপুরের ২ নম্বর কূপে গ্যাসের নতুন স্তরের সন্ধান মেলে।
ওই কূপে মজুতের পরিমাণ প্রায় ১৫৭ বিলিয়ন ঘনফুট বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ২৬ নভেম্বর সবচেয়ে পুরনো গ্যাসক্ষেত্র হরিপুরের ১০ নম্বর কূপে গ্যাসের সন্ধান মেলে। এর চার দিন আগে ২২ নভেম্বর কৈলাসটিলায় পরিত্যক্ত ২ নম্বর কূপ থেকে জাতীয় গ্রিডে ফের গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। ওই কূপ থেকে দৈনিক ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। প্রসঙ্গত, প্রথম গ্যাসের সন্ধান মেলে ১৯৫৫ সালে হরিপুরে। এরপর আবিষ্কার হতে থাকে একের পর এক গ্যাসক্ষেত্র। বর্তমানে এসজিএফএলের আওতাধীন পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। সেগুলো হলো- হরিপুর, রশিদপুর, ছাতক, কৈলাসটিলা ও বিয়ানীবাজার। এর মধ্যে টেংরাটিলায় দুর্ঘটনার পর ছাতক গ্যাসক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বাকি চারটি গ্যাসক্ষেত্রের ১৪টি কূপ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০-৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিড লাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে।