মেয়াদের মধ্যবর্তী সময়ে এসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নিলেন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। বাকি মেয়াদে ডা. শাহাদাতকে অন্তত পাঁচটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। যার মধ্যে নগরীর জলাবদ্ধতা ইস্যু, সিটি করপোরেশনের চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনা অন্যতম।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের নামে তিলে তিলে একটি সুন্দর শহরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করব। জলাবদ্ধতা মুক্ত নগরী গড়তে শহরের মধ্যে প্রবাহিত খাল উদ্ধার করে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করব। অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে খাল ও ছড়া মুক্ত করে উভয় পাশ রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করব। এ ছাড়া মশা নিধন কর্মসূচি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্য খাতকে অধিক গুরুত্ব দেব।’ জানা যায়, আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে গতকাল চসিকের মেয়র হিসেবে শপথ নেন ডা. শাহাদাত হোসেন। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করায় সিটি করপোরেশনের চেইন অব কমান্ড কার্যত ভেঙে পড়েছে। নড়বড়ে হয়ে গেছে প্রশাসনিক শৃঙ্খলাও। দ্রুততম সময়ের মধ্যে চেইন অব কমান্ড ঠিক করা হবে তার অন্যতম চ্যালেঞ্জ। অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু থেকে গলা পরিমাণ পানিতে তলিয়ে যায় অলি-গলি। নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে মেয়রকে। যদিও বিগত সময়ের মেয়ররা এ সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশা নিধন কর্মসূচি এবং স্বাস্থ্য বিভাগের অবস্থা খুবই খারাপ। এ তিন সেক্টর পুরোপুরি সক্রিয় করে নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করা হবে সিটি মেয়রের অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজের অন্যতম। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত রেজাউল করিম চৌধুরীকে নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কারচুপির অভিযোগে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন নগর বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন। কারচুপি প্রমাণ হওয়ায় গত ১ অক্টোবর শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। গত ৮ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন কমিশন।
চসিক মেয়র হিসেবে শপথ নিলেন শাহাদাত হোসেন : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সভাকক্ষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান। এদিকে শপথ গ্রহণ শেষে চট্টগ্রামের নতুন মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। চট্টগ্রাম শহরের অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করব। যত দ্রুত সম্ভব জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প হাতে নেওয়ার চেষ্টা করব। ইশতেহার পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। চট্টগ্রামের মূল সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ সমস্যাসহ নাগরিকের সব সমস্যা দূর করে সবার সহযোগিতায় চট্টগ্রামকে পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে তুলব। গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি এবং হেলদি সিটি হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলা হবে। অপরদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেশি বলে উল্লেখ করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ। চসিকের মেয়র শাহাদাত হোসেনের শপথ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। হাসান আরিফ বলেন, এ সরকার রুটিন কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) নয়, ছাত্র আন্দোলনের পর বিশেষ প্রেক্ষাপটে গঠিত হয়েছে। তাই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও বেশি। বিপ্লবের মাধ্যমে ছাত্র-জনতা এবং শ্রমিক যে অর্জনের জন্য আত্মত্যাগ করেছে, সেই লক্ষ্য পূরণে মেয়র কাজ করবেন বলে আশা করি। পাহাড়ঘেরা জলমগ্নমুক্ত চট্টগ্রাম দেখতে চাই। উপদেষ্টা আরও বলেন, চট্টগ্রামে কাউন্সিলর না থাকায় ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে যারা মেয়রের নেতৃত্বে কাজ করবে। সিটি করপোরেশনগুলোতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। বর্তমান চট্টগ্রামের মেয়রের মেয়াদ আইন অনুযায়ী যেটা হবে ততদিন তিনি দায়িত্বে থাকবেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম প্রমুখ।