কক্সবাজারে বেড়েই চলেছে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা। যার বেশির ভাগ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ শহরের ভাসমান যৌনকর্মীদের অবাধে মেলামেশার কারণে এ সংখ্যা বাড়ছে বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন। গেল তিন মাসে শুধু জেলা সদর হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষায় এইচআইভি পজিটিভ হয়েছেন ৫৩ জন। তার মধ্যে ৪১ জনই রোহিঙ্গা। চিকিৎসকরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের মাঝে বহুবিবাহ প্রচলন, অবৈধ মেলামেশা, প্রটেকটিভ মেজার ব্যবহার না করাসহ নানা কারণেই এইডস সংক্রমণের হার বেশি। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদার বলেন, গবেষণার পর কক্সবাজারকে এইডসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফে-উখিয়ায় রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। এখানে বসবাস করছে বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয়দের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের মাঝে বহুবিবাহ প্রচলন এবং অবাধ মেলামেশার কারণেই এইডস সংক্রমণের হার বাড়ছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রায় সাত বছরে ৭১০ জন এইডস রোগে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে রোহিঙ্গা ৬১২ জন, আর বাংলাদেশি ৯৮ জন। তবে পরবর্তী দুই বছর তিন মাসে এই সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এই সময়ের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৯৬৩ জন। তাদের মধ্যে রোহিঙ্গা ৬৫১ জন। এ সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশিদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়েছে। এ সংখ্যা ৩১২। এ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, পূর্ববর্তী সাত বছরের তুলনায় গত দুই বছরে স্থানীয়দের মধ্যে সংক্রমণ তিন গুণ বেড়েছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজারে এইচআইভি আক্রান্তের হার বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। গত দুই বছরে এই হার আগের সাত বছরের দ্বিগুণের বেশি।’
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে শনাক্ত হয় প্রাপ্তবয়স্ক ৩৮৫ জন পুরুষ, ৬০৩ জন নারী, ৬৮ জন ছেলেশিশু, ৭৩ জন মেয়েশিশু ও তিনজন ট্রান্সজেন্ডারসহ ১ হাজার ১৩২ জন। তাদের মধ্যে ৯৬৪ জন রোহিঙ্গা, ১৬৮ জন বাংলাদেশি। অন্যদিকে উখিয়া ক্যাম্পের বিভিন্ন হাসপাতালে শনাক্ত হয়েছে তিন ট্রান্সজেন্ডারসহ ৯৪৭ জন পুরুষ, নারী ও শিশু।। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ৮১০ জন, স্থানীয় ১৩৭ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৪৮ জন রোহিঙ্গা ও ৭৯ জন বাংলাদেশির। চিকিৎসা ও সেবাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢলের পর কক্সবাজারে এইডস রোগীর সংখ্যা হু-হু করে বাড়ছে। এইচআইভি বিস্তারের প্রধান কারণ- রোহিঙ্গাদের মধ্যে অসচেতনতা ও অনিরাপদ যৌন মিলন। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে এ রোগ বাড়ছে। এজন্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের চিকিৎসা সমন্বয়ক আবু তোহার। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে একজন রোহিঙ্গা এইডসে আক্রান্ত হওয়ার পরও হয়তো সে আরও চার থেকে পাঁচজনকে বিয়ে করে। ফলে তাদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে এই ভয়ংকর ব্যাধি। ভয়াবহতা বিবেচনায় কক্সবাজারকে এরই মাঝে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদার বলেন, কক্সবাজারে এইডস রোগীর বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। গবেষণার পর কক্সবাজারকে এইডসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, সৈকত এলাকাসহ পর্যটন শহরে এইডস ঝুঁকি মোকাবিলায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে। ভাসমান রোহিঙ্গারা যাতে যৌনকর্মী হয়ে না যায় সেজন্য অভিযান চালিয়ে তাদের ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।