বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে নেওয়া হয়েছিল অপ্রয়োজনীয় তিনটি প্রকল্প। জনগণের প্রকৃত চাহিদা ও সরকারের বাস্তবায়ন সক্ষমতা যাচাই না করেই কেবল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতাভুক্ত করা হয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য ৩ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। যার পুরো অর্থ আসে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে। প্রকল্প তিনটি হলো- নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোরে শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ও খুলনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার।
জানা গেছে, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প তিনটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বাতিলের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এ তথ্য জানিয়ে সরকারের উচ্চ পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও বাস্তবায়ন সংস্থাগুলো এমন অপ্রয়োজনীয় এবং রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত প্রকল্পগুলো চিহ্নিত করে বাতিল করার চেষ্টা করছে। শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে নেওয়া প্রকল্প তিনটি বাতিল হলে সরকারের ২ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় নেত্রকোনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে একনেক বৈঠকে ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪০ লাখ ৯৯ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে।
শেখ হাসিনার নানার নামে যশোরের মনিরামপুরে শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল। এর ব্যয় ধরা হয় ১৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। কর্মকর্তারা জানান, যশোরের একাডেমি বন্ধ করার জন্য পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও গ্রামীণ প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে যথা সম্ভাব্যতা যাচাই করা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের প্রকল্প নেওয়ার আগে ফলাফল এবং বিনিয়োগকৃত অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক মূল্যায়ন করা হলে এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত। তারা বলেন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ আগে বাস্তবায়ন করা উন্নয়ন একাডেমি, প্রশিক্ষণ একাডেমি অথবা একই ধরনের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করা উচিত।
খুলনায় বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর। এতে ব্যয় ধরা হয় ৫৫৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ হওয়ার কথা থাকলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, বিগত সরকারের সময়ে প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করে প্রকল্প অনুমোদন ও তহবিল প্রাপ্তি সহজ করা হয়েছিল, যা জনগণের সম্পদের সদ্ব্যবহারের সুযোগকে নষ্ট করেছে। রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত প্রকল্পগুলো চিহ্নিত করে বাতিলের পাশাপাশি এসব প্রকল্প শুরুর সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, জনগণের প্রকৃত চাহিদা এবং সরকারের বাস্তবায়ন সক্ষমতা যাচাই না করেই এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, তাই এখন বাতিল করা হচ্ছে।